
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনজন উদীয়মান ও মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) তিনটি গুরুত্ব পদে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় এবং তাদের পক্ষে কথা বলার লক্ষ্য নিয়ে তারা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি নেতৃত্বের যোগ্যতা, শিক্ষাগত প্রজ্ঞা এবং সাহসী চিন্তাধারার কারণে ইতোমধ্যেই তারা আলোচনায়ও উঠে এসেছেন।
ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের শালচূড়া গ্রামের সন্তান আহমেদ হোসেন জনি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর (এমএ) প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। তিনি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র এবং শেরপুর জেলা ছাত্র সংসদের সভাপতি। তিনি ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাম্পাসের শিক্ষাবান্ধব আন্দোলন, গণতান্ত্রিক চর্চা ও ছাত্র-কল্যাণমূলক কার্যক্রমে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। আত্মবিশ্বাসী ও চিন্তাশীল এই প্রার্থী একজন দায়িত্বশীল নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২৮তম ব্যাচের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান। তিনি বিজয় একাত্তর হলের একজন আবাসিক ছাত্র। ডাকসুর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। তার বাড়ি ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরেই। তরুণ প্রজন্মের স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর হিসেবে নাহিদ ইতোমধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর সহজ ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা, সংগঠনিক দক্ষতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবিচল অবস্থান ছাত্রসমাজে আশার আলো জাগিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে পাঠকক্ষ সম্পাদক পদে আরাফাত আক্তার তামান্না স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের ছাত্রী আরাফাত আক্তার তামান্না। তিনি রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সদরের সন্তান। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তী সব ধরনের প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। তার লক্ষ্য হল রোকেয়া হলে একটি আধুনিক, সুশৃঙ্খল ও অংশগ্রহণমূলক পাঠকক্ষ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ভারতসীমান্ত ঘেঁষা এ উপজেলার এই তিন শিক্ষার্থী কেবল নিজেদের ব্যক্তিগত সাফল্যই নয়, বরং পুরো এলাকার জন্য এক অনন্য গৌরবের প্রতীক। তারা প্রমাণ করেছে, মফস্বলের প্রান্তিক অঞ্চল থেকেও দক্ষ নেতৃত্ব, সৎ সাহস এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব। স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাবিদরা তাদের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন, তারা বিজয়ী হলে শুধু নিজেদের হল কিংবা বিভাগ নয়, গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদেও স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আহমেদ হোসেন জনি বলেন, নির্দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট প্রদানের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য শিক্ষার্থীরা মুখিয়ে আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমার কাজ করার একটি দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের পালসকে প্রাধান্য দিয়ে আমি আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমি নির্বাচিত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দখলদারিত্বমুক্ত হল, এক শিক্ষার্থী এক সিট ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত খাবার, সুষ্ঠু পড়াশোনার পরিবেশ, মশা ও ছারপোকামুক্ত হল, মননশীল সাহিত্য ও দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ, নতুন ভবন তৈরির কাজ ত্বরান্বিত করা, হলে একটি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, রিডিং রুম আধুনিকায়ন, হলের সার্বিক সেবার মান উন্নতকরণ, লিফট সমস্যার স্থায়ী সমাধানসহ শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে পাঠকক্ষ সম্পাদক পদ প্রার্থী আরাফাত আক্তার তামান্না বলেন, আমি কখনও কোনো রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম না, এখনও নেই এবং কখনও যুক্ত হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও নেই। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের দাবি চাওয়াই আমার অঙ্গীকার। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি করতেই এ নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ। সবার কাছে দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করেছেন এ শিক্ষার্থী।
ঝিনাইগাতী উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অধ্যাপক মো. আবুল হাশেম বলেন, ডাকসু নির্বাচনে আমাদের এ উপজেলার তিনজন মেধাবী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ সত্যিই আমাদের গৌরবের বিষয়। এ নির্বাচনে জয়ী হলে এই নবীন মুখগুলো হয়তো একদিন দেশের নেতৃত্বেও অবদান রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি আমরা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর