• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১০ মিনিট পূর্বে
আবু রায়হান সরকার
নোয়াখালি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৪৩ রাত

গাছে ঝুলন্ত লাশ; জয়ের দাবি ছাত্রলীগ সভাপতি, স্থানীয়রা বলছেন ছাত্রদলকর্মী

প্রতীকী ছবি

নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার আন্ডারচরে এক যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত শনিবার সকালে ২৩ আগস্ট ওই যুবকের বাড়ির পাশে একটি পেয়ারা গাছে তাঁর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় পরিবার। নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করে বলছেন, এটি আত্মহত্যা নয়, বরং ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে, তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে দাবি করেছেন, নিহত মাহফুজ ছাত্রলীগের সভাপতি। তবে মাহফুজ ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে দাবি করছেন তাঁর বন্ধু ও ছাত্রদল নেতারা।

এদিকে, নিহত মাহফুজের মা হাজরা বেগম ছেলের স্মৃতি মনে করে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। দরিদ্র কৃষক ছায়েদুল হকের পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে অভাবের এই সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে মাহফুজকে হারিয়ে নির্বাক পলকে তাকিয়ে আছেন হাজরা বেগম।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নোয়াখালী সদর উপজেলার ২০ নং আন্ডারচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড কাজিরচর এলাকায় গত শনিবার সকালে ২২ বছর বয়সী এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়। নিহত যুবকের পরিবার অভিযোগ করে দাবি করছে, এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ভোরে স্বজনরা প্রথমে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ নামিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ঘটনার পরপরই শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, নিহত যুবক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, মাহফুজ ছাত্রদলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতেন। ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাপুত্র জয় গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফেলার পাঁয়তারা করছেন।

নিহত মাহফুজের পিতা ছায়েদুল হক জানান, তাঁর ছেলের মোবাইলে টিকটকে অশ্লীল মেসেজ পাঠাতো প্রবাসী স্ত্রী। তাঁর মেয়েরা বিষয়টি টের পেলে তাঁকে জানালে তিনি শুক্রবার সকালে তাদের বাড়িতে গিয়ে প্রবাসী সোহাগের মাকে বিষয়টি জানান।

তিনি বলেন, “আপনাদের ছেলের বউ আর আমার অবিবাহিত ছেলে। এসব অশ্লীল মেসেজ আর যেন না দেয়। ছেলেকে আমি সতর্ক করবো, বউকে আপনারা সতর্ক করেন।” পরে বিকেলে ৪টায় পাশের বাড়িতে সোহাগের মা, বউ, বোন জামাই গিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসে।

তারা বলে, পরের দিন তাঁর ছেলে মাহফুজের লাশ পাঠাবে। তিন মাস পর তাদের ছেলে এসে তাদের পরিবারের সবাইকে “সাফ” করবে।

মাহফুজের পিতা আরও জানান, “আমার ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। সাড়ে সাতটায় বাড়িতে গিয়ে ছেলে খেয়ে বাজারে যায়। বাড়িতে ফেরে রাত ১২টা-১টায়। সেদিন আর রাতে বাড়ি ফেরেনি। পরে আমি ছেলেকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজছিলাম। পরে ভাতিজা এসে বলতেছে, ‘কাকা, মাহফুজকে নাকি ঘরের পাশে পেয়ারা গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।’ আমি গিয়ে দেখি, মহিলাদের মেক্সির কাপড় দিয়ে পেয়ারা গাছের ডালের সাথে ঝুলিয়ে খাঁড়া করে রাখা হয়েছে। তাঁর মা ধরতেই ছেলে বুকে পড়ে গেছে। এটা আত্মহত্যা না, আমার ছেলেকে হুমকি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “পরে থানা থেকে পুলিশের এসআই জয়নাল আবেদিন আসে। আমি তো অশিক্ষিত মানুষ। তারা লিখে নিয়েছে, পরে আমার হাত থেকে টিপসই নিয়েছে। পরে পোস্টমর্টেমের জন্য মাইজদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে এসআই আবার এসে প্রবাসী সোহাগের বাড়িতে দুই ঘণ্টা দরজা বন্ধ করে মোবাইল চেক করছে। পরে তারা টিকটক ও মেসেজগুলো ডিলিট করছে। আমার ছেলের মোবাইল পুলিশ নিয়ে গেছে। আমার ছেলের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চাই।”

মাহফুজের বোন মুর্শিদা বেগম জানান, পাশের বাড়ির এক প্রবাসী স্ত্রীর সঙ্গে টিকটককে কেন্দ্র করে শুক্রবার তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়। তারা বলে, “তোর ভাইয়ের লাশ পাবি।” পরে শনিবার সকালে তারা মাহফুজকে হত্যা করে পেয়ারা গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনরা। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান মাহফুজের পরিবার।

তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি দাবি করা রাজনৈতিক পরিচয়কে ভুয়া বলে দাবি করেছেন নিহতের সহকর্মীরা। মাহফুজ ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে জানান আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম। তাঁরা বলেন, মাহফুজ তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর পুরো পরিবার তাঁর ওপর নির্ভরশীল ছিল। তাঁরা আত্মহত্যা করেছেন না তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চান। সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছাত্রলীগ দাবি করা ভুয়া বলেও জানান তিনি।

তবে যাঁদের বিষয়ে অভিযোগ, সে প্রবাসে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁর মা নুরজাহান বেগম জানান, মাহফুজ অনেক ভালো ছেলে ছিল। তাঁদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো। টিকটক নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল কিনা তিনি জানেন না। সে আত্মহত্যা না হত্যার শিকার, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও চান তাঁরা।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জয়নুল আবেদিন জানান, ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিলে বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, “তাদের কথা শুনলে হবে নাকি? তারা বলতেছে মেরে ফেলছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া কিছু বলা যাবে না।” তবে থানায় হত্যা মামলা না নেওয়ায় নিহত মাহফুজের পিতা কোর্টে মামলা করেছেন বলে জানান মাহফুজের পিতা।

মাহফুজ এ ঘটনা আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড, এখনো প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে পরিবার ও স্থানীয়দের একটাই দাবি, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় যেন প্রকৃত সত্য ঘটনা আড়ালে থেকে না যায়।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]