
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের চাঁদেরপাড়ায় বাকখালী নদীর তীরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে এক পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার (২৬ আগষ্ট) বিকেলে ফুটবল খেলতে গিয়ে বল আনতে নদীতে নেমে নিখোঁজ হয়েছে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মিসবা (১৪)। দুই বছর আগে একইভাবে তার বড় ভাই নকিবও পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছিল। পরপর দুই সন্তানের এমন পরিণতি এক পরিবারে নেমে এনেছে অপার শোক।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল বিকেলে চাঁদেরপাড়ার বাকখালী নদীর তীরে সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলছিল মিসবা। খেলার একপর্যায়ে বলটি গড়িয়ে পড়ে নদীতে। সেটি তুলতে গিয়ে হঠাৎ পানির স্রোতে তলিয়ে যায় সে। মুহূর্তেই চিৎকার শুরু হয়। দৌড়ে আসে প্রতিবেশীরা। কিন্তু মিসবাকে আর দেখা যায়নি।
খবর পেয়ে পরিবার ছুটে যায় নদীর তীরে। মা-বাবা বারবার অসহায় চোখে নদীর বুকে তাকিয়ে ডেকেছেন- বাবা মিসবা, একবার শুধু উঠে এসো। কিন্তু সাড়া মেলেনি। কান্নায় ভেঙে পড়ে চারপাশ।
স্থানীয়রা প্রথমে নিজ উদ্যোগে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উদ্ধার কাজে নামে ফায়ার সার্ভিস। রাতেই চট্টগ্রাম থেকে ডুবুরি দল রওনা হয় কক্সবাজারের উদ্দেশে। কোস্টগার্ডও যুক্ত হয় স্পিডবোট নিয়ে। আজ সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডুবুরিরা খোঁজ শুরু করেছে। একইসঙ্গে সমুদ্র সৈকতের লাইফগার্ড সদস্যরা সহযোগিতা করছেন। কিন্তু এখনো মিসবার কোনো খোঁজ মেলেনি।
মিসবা একই এলাকার নুরুল আলমের ছেলে। তিনি বললেন, আল্লাহ কেন আমাদের সঙ্গে এমন করলেন? দুই বছর আগে আমার বড় ছেলে নকিব জামে মসজিদের পুকুরে ডুবে মারা যায়। সেই ক্ষত শুকায়নি, আবারও নদীতে গেল মিসবা।
প্রতিবেশীরা বলছেন, নুরুল আলমের পরিবার অত্যন্ত সৎ ও সাধারণ। অথচ পরপর দুই ছেলেকে হারিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মা বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সেই শোক কিছুতেই কাটছে না।
স্থানীয় সাংবাদকর্মী শাহী কামরান বলেন, একই পরিবারের দুই ছেলে এভাবে পানিতে হারিয়ে যাওয়া অকল্পনীয় ট্র্যাজেডি। গ্রামজুড়ে শুধু শোক আর কান্না।
প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল মালেক আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, এমন দৃশ্য আর দেখতে চাই না। নদী ও পুকুরপাড়ে শিশুদের খেলাধুলা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এলাকাজুড়ে এখন ভিড় করছেন মানুষ। অনেকে দোয়া করছেন মিসবার সুস্থ ফেরার জন্য। আবার কেউ স্মরণ করছেন দুই বছর আগের সেই কালো দিনকে, যেদিন নকিবকে হারিয়েছিল পরিবারটি।
স্থানীয় সাইফুল, নজরুল, কাওসার ও জসিম বলেন, মিসবার নিখোঁজ হওয়ার এই ঘটনা যেন সবার চোখ খুলে দেয়। প্রতিটি পরিবারকে এখন থেকে আরও সচেতন হতে হবে। কারণ এক মুহূর্তের অসতর্কতায় ভেঙে যেতে পারে একটি পুরো পরিবার।
তাদের মতে, মিসবার বাড়িতে এখন নিস্তব্ধতা। একদিকে নিখোঁজ ছেলেকে খুঁজে ফিরছে স্বজনরা, অন্যদিকে আরেক সন্তানের মৃত্যু স্মৃতি তাড়া করছে সবাইকে। যেন এক দুঃস্বপ্নে আটকে গেছে এই পরিবার।
কক্সবাজার সদরের নদী পরিব্রাজক দলের নেতা ও বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম শ্রাবণ বলেন, শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যু বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের এক অমীমাংসিত শোকের গল্প। প্রতিবছর অসংখ্য পরিবার এভাবে সন্তান হারায়। নদী-খাল-পুকুরপাড়ে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু গ্রামীণ জীবনের সহজ-সরল খেলাধুলায় এ দুর্ঘটনা ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর