
চারপাশে থই থই পানি, মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি ব্রিজ। দেখলে মনে হয় যেন সংযোগ সড়কবিহীন অপরিকল্পিত কোনো ব্রিজের এই করুণ পরিণতি। বাস্তবে সড়ক সংযুক্ত ব্রিজটি এক সময় গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগপথ ছিল, যা এখন মেঘনার ভাঙনে তলিয়ে গেছে নদীগর্ভে। ভাঙনকবলিত মানুষের শেষ নিঃশ্বাস হয়ে মেঘনা নদীর বুকে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজটি।
স্থানীয়রা জানান, নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের লাল পোল ব্রিজটি দিয়ে কালাদূর থেকে ভূমিহীন বাজারে যাওয়া যেত। সড়কটি এক সময় গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগপথ ছিল। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এ পথ ধরে যাতায়াত করতেন। ওই সড়কে নির্মিত লাল পোল সেতুটি ছিল মানুষের প্রাণের সেতু। কিন্তু মেঘনার ভাঙন একে একে পুরো সড়ক, বাড়িঘর গিলে ফেললেও আজও সেতুটি নদীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
নুরুল আমিন নামের এক বৃদ্ধ কৃষক বলেন, "আমরা বহুবার এই ব্রিজ পার হয়ে কালাদূর বাজারে গেছি। মোটরসাইকেল দিয়ে কত মাইল আমরা গিয়েছি তার হিসেব নেই। আজ নদী সব গিলে খেয়েছে, কিন্তু সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে আমাদের করুণ স্মৃতির সাক্ষী হয়ে।"
মো. ইলিয়াস হোসেন নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "নদী ভাঙনের ফলে সবাই নিঃস্ব। স্থানীয়দের যাতায়াত, কৃষি ও বাজারকেন্দ্রিক অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। বহু পরিবার নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র। ব্রিজটি দেখলে মানুষের বুকের ভেতর হাহাকার বেড়ে যায়।"
মো. ফাহিম নামের চানন্দী ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ী বলেন, "নদীভাঙনে শুধু ঘরবাড়ি নয়, আমাদের রুটি-রুজিও ভেসে গেছে। আমরা মানববন্ধন, সভা সমাবেশ অনেক কিছু করেছি কিন্তু কোথাও সাড়া পাইনি। প্রতিদিন আমরা গৃহহীন হচ্ছি। সরকার দ্রুত টেকসই বাঁধ না দিলে হয়তো আগামীতে পুরো ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে।"
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পুরো হাতিয়ায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হচ্ছে। টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।"
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেন, "প্রায় এক বছর আগে ব্রিজটি মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর আশপাশে বসতঘর-সড়ক কিছুই নেই। সব কিছু নদীগর্ভে চলে গেলেও ব্রিজটি দাঁড়িয়ে আছে। তার আশপাশে এখনও নদী ভাঙন হচ্ছে। আমাদের প্রায় ছয় কিলোমিটার প্রতিরক্ষা প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে নদী ভাঙন কমবে বলে আশাবাদী। তবে ব্রিজটি নিয়ে আসলে কিছুই করার নেই।"
সর্বশেষ খবর