
স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজে নানা ধরনের আধুনিক অস্ত্র প্রদর্শন করেছে চীন। রাজধানী বেইজিংয়ে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হয় এই সামরিক কুচকাওয়াজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে জাপানের আত্মসমর্পণের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত কুচকাওয়াজে অংশ নেন বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা। উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনও।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, কুচকাওয়াজ চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) প্রথমবারের মতো কিছু অস্ত্র জনসম্মুখে প্রদর্শন করেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির সামরিক সক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক মহলে প্রভাব বিস্তারের স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে বিমান প্রতিরক্ষা লেজার, হাইপারসনিক অস্ত্র ও সামুদ্রিক ড্রোন প্রদর্শিত হয় কুচকাওয়াজে। দেখানো হয় বিরল কিছু অস্ত্রও।
ক্ষেপণাস্ত্র
এই প্রথমবারের মতো চীন ‘ট্রায়াড’ সক্ষমতার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র সমুদ্র, স্থল ও আকাশ– তিন মাধ্যম থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়। এটি বিশ্বের প্রায় যেকোনো স্থানে হামলার উপযোগী বলে দাবি করেছে দেশটি।
এই ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে দূরপাল্লার বিমানভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র জিংলেই-১, সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র জুলাং-৩ এবং স্থলভিত্তিক আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ডংফেং-৬১ (ডিএফ-৬১) ও ডংফেং-৩১। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানায়, এগুলো চীনের কৌশলগত ‘মূখ্য’ শক্তি এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া ডংফেং-৫সি (ডিএফ-৫সি) হলো ১৯৭০-এর দশকে শুরু হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সর্বশেষ সংস্করণ। এটি তরল জ্বালানি ব্যবহার করে এবং একাধিক স্বাধীন ওয়ারহেড একক লক্ষ্যবস্তুতে নিক্ষেপ করতে সক্ষম।
কুচকাওয়াজে জাহাজবিধ্বংসী হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রেরও প্রদর্শনী করা হয়েছে। চীন এর আগে নকল মার্কিন বিমানবাহী নৌযানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে– ইয়িংজি-১৯, ইয়িংজি-১৭ এবং ইয়িংজি-২০।
অন্যান্য প্রদর্শিত ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে– ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র চাংজিয়ান-২০এ, ইয়িংজি-১৮সি, চাংজিয়ান-১০০০ এবং আরও কিছু হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ইয়িংজি-২১, ডংফেং-১৭ এবং ডংফেং-২৬ডি। এসব ক্ষেপণাস্ত্র সকল পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করতে সক্ষম বলে উল্লেখ করা হয় চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে।
লেজার অস্ত্র
ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য লেজার অস্ত্র উন্নত করছে চীন। কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত ড্রোনবিরোধী সিস্টেমের মধ্যে ছিল ক্ষেপণাস্ত্র বন্দুক, উচ্চ-শক্তির লেজার অস্ত্র এবং উচ্চ-শক্তির মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, এগুলো চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ড্রোনবিরোধী সিস্টেমে ‘ট্রায়াড’- এর সক্ষমতার প্রতিফলন।
ড্রোন
কুচকাওয়াজে চীন এমন ড্রোন প্রদর্শন করেছে যা পানির নিচে এবং আকাশে– উভয় মাধ্যমে ব্যবহার করা সম্ভব। অনুসন্ধান এবং লক্ষ্যবস্তুকে আঘাতের জন্য ব্যবহৃত ড্রোনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে জাহাজ থেকে চলাচলের জন্য নকশা করা মনুষ্যবিহীন হেলিকপ্টারও ছিল। সমুদ্রভিত্তিক সিস্টেমের মধ্যে ছিল– সাবমেরিন, সারফেস ভেসেলস এবং একটি মাইন-লেইং সিস্টেম।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর