
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ‘নুরাল পাগলা’র আস্তানায় হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা আস্তানায় ভাংচুর চালায় এবং মাজারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের দুটি গাড়ি এবং ইউএনওর গাড়িও ভাংচুর করা হয়। নুরাল পাগলার অনুসারী ও উত্তেজিত জনতা একে অপরের ওপর ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলা ও ভাংচুরের পর সেনাবাহিনী ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু বিকাল চারটার দিকে চারদিক থেকে উত্তেজিত জনতা জড়ো হলে প্রশাসন সরে যেতে বাধ্য হয়। পরে উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার আস্তানায় ঢুকে পড়ে। তারা বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর চালায় এবং লুটপাট করে নিয়ে যায়।
পরে বিক্ষুব্ধরা বিশেষ কায়দায় দেওয়া কবর ভেঙ্গে নুরাল পাগলার মরদেহ নিয়ে মিছিল করতে থাকে। তারা ঢাকা-খুলনা মহাড়কের পদ্মার মোড়ে মরদেহ নিয়ে রাস্তার ওপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আবারও সেনাবাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
নুরাল পাগলের অনুসারী ও উত্তেজিত জনতার ইট-পাথর নিক্ষেপে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সবাইকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুল রহমান বলেন, ‘এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আমার গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাড়ি ভাংচুর করেছে জনতা। পরে নুরাল পাগলের আস্তানায় হামলা চালিয়ে মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে সঠিক সংখ্যা বলতে পারছি না। পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জানা গেছে, নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর তার কবর ভিন্ন রীতিতে দেওয়া নিয়ে এলাকায় ধর্মীয় সংবেদনশীলতা তৈরি হয়। কবরটিকে মক্কা শরীফের আদলে নির্মাণ, রং করা এবং স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক উঁচু করা হয়। এ নিয়ে জেলাজুড়ে আলেম সমাজের মধ্যে উত্তেজনা ও অসন্তোষ দেখা দেয়।
গত ২৩ আগস্ট নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর পরিবারের সিদ্ধান্তে নিজ বাড়ির সামনের অংশে প্রায় ১২ ফুট উঁচু একটি কাঠামোর ভেতরে তাকে কবর দেওয়া হয়। পরে কবরটিকে কাবা শরীফের আদলে রং করা হয় এবং ‘হযরত ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা ব্যানার টাঙানো হয়। এতে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গোয়ালন্দ উপজেলার ইমাম পরিষদ ও তৌহিদী জনতা গত ২৬ আগস্ট বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় তৌহিদী জনতা ও ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলোÑ কবর থেকে কাবা শরীফের আদলে করা রং পরিবর্তন করতে হবে, ‘ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ করতে হবে এবং কবরের উচ্চতা কমিয়ে স্বাভাবিক করতে হবে। নুরাল পাগলার ভক্ত ও পরিবারের লোকজন প্রথম দুটি দাবি মেনে নিলেও কবরের উচ্চতা স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনার জন্য ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় চান।
সভা শেষে তৌহিদী জনতা ও ইমাম পরিষদ তাদের ঘোষিত ২৬ আগস্টের বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টির স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে সবপক্ষকে নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। পরে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় নেয়। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে জেলার ৫টি উপজেলাতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর