
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস এবার জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা থেকে জুলুস শুরু হয়। আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের আয়োজনে এটি ৫৪তম জুলুস।
লাখো মানুষের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ জুলুসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ)। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা.জি.আ) ও সৈয়্যদ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ্ (মা.জি.আ)। বৃহস্পতিবার থেকেই তারা চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।
জুলুসকে ঘিরে শনিবার সকাল থেকে কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি থেকেও জুলুসপ্রেমিরা ভিড় করেছেন। জুলুস শুরুর আগ থেকেই ষোলশহর, বিবিরহাট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেইট, জিইসি এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে মাইলের পর মাইল হেঁটে জুলুসে অংশগ্রহণকারীদের শরবত, পানি, রুটি, জিলাপি, খেজুর, কলা, চকলেট দিয়ে আপ্যায়ন করছেন ভক্তরা।
হামদ, নাতে রাসূল, দরুদ ও স্লোগানে মুখরিত পুরো জুলুস। তবে এবারের জুলুসে জাতীয় পতাকা, আনজুমান ট্রাস্টের পতাকা ছাড়া অন্য যে কোনো পতাকা, ড্রাম সেট আনা, নারীর অংশগ্রহণ ও খাবার নিক্ষেপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জুলুস বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, জিইসি ঘুরে একই পথে ফিরে আসে জামেয়া মাদরাসার জুলুস মাঠে। সেখানে মাহফিল, জোহর নামাজ ও দেশ জাতির সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হবে।
আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, রাসুল (সা.)-এর শুভাগমনের পনেরশ’ বছর পূর্তি এ বছর। একইসঙ্গে আনজুমান ট্রাস্ট শতবর্ষে পদার্পণ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে খ্যাত এ জুলুস এখন চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও মানবিক কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল থেকে চট্টগ্রামে প্রথম জশনে জুলুসের সূচনা হয়। গাউসে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ্ (রহ.)-এর দিকনির্দেশনায় বলুয়ারদীঘি পাড় খানকাহ শরিফ থেকে আনজুমান সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে শেষ হয়েছিল প্রথম আয়োজন।
এদিকে, জুলুস উপলক্ষ্যে বর্ণিল সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে তোরণ। সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। সড়কের দুপাশে বিশেষ পতাকাও পুঁতে দেওয়া হয়েছে। বসেছে খাবারসহ বিভিন্ন আইটেমের অস্থায়ী দোকানও। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবীরা বিতরণ করছেন শরবত। পুরো এলাকায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। একইসঙ্গে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন।
জুলুসে অংশ নেওয়া ইউনূস আহমেদ নামে একজন বলেন, কর্ণফুলী থেকে জুলুসে এসেছি। প্রতিবছরই আসি। এই দিনটির অপেক্ষায় থাকি।
ট্রাকে করে জুলুসে পানি বিলি করছিলেন নূর আলম। তিনি বলেন, জুলুসে সওয়াবের উদ্দেশে পানি বিতরণ করছি। আশেকে রাসুলদের জন্য আজ বড় আনন্দের দিন।
চট্টগ্রামে জশনে জুলুসের প্রবর্তন হয়েছে ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল। দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের (পাকিস্তান) তৎকালীন সাজ্জাদানশীন, আধ্যাত্মিক সাধক, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রা.) এ জশনে জুলুসের প্রবর্তন করেন। জুলুসের মধ্য দিয়ে প্রিয় নবিজির প্রতি সম্মান ও বিশ্বশান্তির বার্তা দেওয়া হয়।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর