
ইবি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তে অবহেলা এবং খুনিদের আইনের আওতায় আনতে বিলম্বের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্লাতিয়ান সোসাইটি। আজ রোববার দুপুর পৌনে দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট সাজিদ আব্দুল্লাহর বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলোয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি মামলার তদন্তভার সিআইডিকে (ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট) দেওয়ার দাবি জানান। তবে দুই মাস অতিক্রম হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের দায়িত্ব পায়নি সিআইডি। মৌখিক আদেশের ভিত্তিতেই সংস্থাটি তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
মানববন্ধনে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ছাত্রদলের সদস্য-সচিব মাসুদ রুমী মিথুন, যুগ্ম-আহ্বায়ক আহসান হাবিব ও ইবি মিল্লাতিয়ান সোসাইটির সভাপতি শাহ ফরিদ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, সাজিদ হত্যাকাণ্ডের দুই মাস অতিক্রম হলেও প্রশাসন এখনো তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে হস্তান্তর করেনি। প্রশাসন মেরুদণ্ডহীন ও বিবেকহীনভাবে আচরণ করছে। প্রশাসনের এই তালবাহানা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আমরা চাই, দ্রুত মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হোক। কেন এটি এখনো দেওয়া হচ্ছে না—এর জবাব প্রশাসনকে দিতে হবে।
সাজিদের বন্ধু ইনসানুল ইমাম নুর বলেন, “ভিসি স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে এ ঘটনায় কোনো টালবাহানা হবে না এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেন মামলাটি সিআইডির কাছে যায়নি? সাজিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসন তাদের সঙ্গে দ্বিতীয়বার তেমন যোগাযোগও করেনি। এখন প্রশাসন চুপ করে আছে। তাহলে কি ধরে নিতে হবে প্রশাসনের সঙ্গে এ ঘটনার কোনো যোগসাজশ রয়েছে? সাজিদের হত্যাকারীরা কি এতটাই ক্ষমতাধর যে তারা পুরো ক্যাম্পাসকে নিয়ন্ত্রণ করছে?”
তিনি আরও বলেন, “আল-কুরআন বিভাগ থেকেও তেমন জোরালো কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। প্রশাসনের এই তালবাহানা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সাজিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল এবং তা গেজেট আকারে পাসও হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমী মিথুন বলেন, “সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও আমরা সবাই নীরব আছি। অতি দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে ছাত্রদল রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেবে এবং প্রয়োজনে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি সকলকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এ নিরাপদ ক্যাম্পাসকে আরও নিরাপদ করার জন্য ছাত্রদলের সাথে সকলে একাত্মভাবে কাজ করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর প্রায় দুই মাস অতিক্রম হলেও এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যার তদন্তের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। কেন দেওয়া হয়নি? কার ইঙ্গিতে দেওয়া হয়নি? কারা এর পেছনে কাজ করছে? নাকি নিয়মতান্ত্রিকভাবেই এত দেরি হচ্ছে? এগুলো প্রশাসনকে স্পষ্ট করতে হবে। যদি এটি পরিকল্পিতভাবে বিলম্বিত করা হয়ে থাকে তবে কারা করছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও বলেন, “এই সপ্তাহের মধ্যেই যদি আনুষ্ঠানিক তদন্তে অগ্রগতি না হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেওয়া হবে। এ নিয়ে যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় কিংবা অপরাধীদের রক্ষা করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেব ইনশাআল্লাহ। এজন্য আমাদের সিরিজ কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে এবং সকল বিভাগ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকে কর্মসূচিতে যুক্ত করতে হবে।”
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসপি মিজানুর রহমান বলেন, তদন্তের বিষয়টি গত ৩ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। চিঠি হাতে পেতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। সিআইডির সহায়তায় আমরা তদন্ত কার্যক্রম চলমান রেখেছি। তদন্ত বন্ধ নেই। অনুমোন হলে আমাদের সকল ডকুমেন্ট সিআইডিকে দিয়ে দিবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর