
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিগন্ত জুড়ে ফুটা সাদা কাশফুল মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের ছয়বাড়িয়া এলাকায় বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগমে মুখর এখন।
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এ কাশফুলের সমাহার। কাশফুল দেখতে পালকের মতো নরম এবং সাদা রঙের হয়, যা শরতের আগমনের প্রতীক। প্রতিদিন সকাল-বিকেলে জেলা শহরসহ আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেঁধে আসেন এই কাশফুল দেখতে। অনেকেই কাশফুরের সমাহারে ঢুকে শখ করে ছবি তুলেন। কেউ সেলফিতে ব্যস্ত, কেউবা পরিবারের ছবি তোলতে ব্যস্ত, কেউ ঘুরে ঘুরে কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
সরজমিন দেখা যায়, পৌর শহরের ছয়বাড়িয়া এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এ কাশফুল আর কাশফুল। এলাকা জুড়ে শত শত মানুষ। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা হাতে অনেকেই সেই সৌন্দর্যকে ক্যামেরাবন্দি করছেন। অনেকে আবার দামী ক্যামেরা হাতে নিজের ফটোসেশনও করছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জন্য ভিডিও বানাতে ব্যস্ত। আর কিছু দিন পরেই দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে কেউ কেউ ফটোসুটে ব্যস্ত। আবার কাশবনের সৌন্দর্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে প্রকৃতির প্রেমে হারিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। কাশবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দি করতে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারও রয়েছেন। যারা ইচ্ছেমতো সব ছবি তুলে দিচ্ছেন। একটি ছবির জন্য ১০ টাকা করে নিচ্ছেন। তাই হাতে দামী ক্যামেরা না থাকলেও চিন্তা নেই, কাশফুলের সৌন্দর্যকে ফ্রেমবন্দি করতে সেসব ফটোগ্রাফাররাই যথেষ্ট।
পৌর শহরের ছয়বাড়িয়া এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কাশফুল দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়। জেলা শহরের স্বপ্নসাজ বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী চৌহান রিক্তা বলেন, শরৎকাল মানেই কাশবন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতি বছর পার্লারে বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকি। আজ মানুষ দুর্গাকে সাজিয়ে এখানে ফটোসুট করতে নিয়ে এসেছি। গত কয়েক বছর ধরেই এই কাশবনে পূজার আগে ফটোসুট করতে আসি। আজও দলবেঁধে সবাই এসেছি। এই সময় কাশফুলের শুভ্রতায় ছেয়ে যায় চারপাশ।
প্রিয়াংকা সাহা জানান, মেয়ে দুর্গা সেজে ফটোসুট করতে এসেছে। তাই মেয়ের সঙ্গে আমি নিজেও এসেছি। এসে সাদা রঙের কাশফুলের শুভ্রতায় ভরে উঠেছে মনপ্রাণ। লেগেছে প্রশান্তি ছোয়া।
তিনি আরো জানান, এই কাশবনে প্রথম আসা। ফুল দেখে খুব ভাল লেগেছে। এখানে ঘুরতে আসলে মানুষ নিরাস হবে না।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা বেলাল হোসেন জানান, ব্যস্ত জীবনে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে আসা। বাড়ির কাছেই এত সুন্দর প্রকৃতির রূপ, তা না দেখলে বুঝতে পারতাম না। ফেসবুকে ছবি দেখে পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। সুযোগ বুঝে নিজেও ছবি তোলে নিয়েছি।
বন্ধুদের নিয়ে জেলা শহর থেকে ঘুরতে আসা অয়ন, রাজীব ও পাপেল জানান, গত কয়েক বছর ধরে এ কাশবন বাগানের ছবি ফেসবুকে দেখছি। আসি আসি করে আর আসা হয়নি। তাই এবার বন্ধুরা মিলে এখানে ঘুরতে এসেছি। ঘুরতে না আসলে বুঝতে পারতাম না, কাশফুলের বাগান যে এত সুন্দর। এখানে এসে সত্যি মন জুড়িয়ে গেছে। বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলছি ও ঘুরে ঘুরে এ বাগান দেখছি। এ যেন এক প্রকৃতির লীলাভূমি।
কাশফুল দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়। সদর উপজেলা কৃষি অফিসার শাহানা বেগম জানান, কাশফুল মূলত ছন গোত্রীয় এক ধরনের ঘাস। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়। এর কারণ হল নদীর তীরে পলিমাটির আস্তর থাকে এবং এই মাটিতে কাশের মূল সহজে সম্প্রসারিত হতে পারে।
তিনি আরো জানান, শরৎ ঋতুতে সাদা ধবধবে কাশফুল ফুটে। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। কাশফুল পালকের মতো নরম এবং রঙ ধবদবে সাদা। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ ধারালো।
তিনি আরো জানান, এর বৈজ্ঞানিক নাম স্যাকারাম স্পন্টেনিয়াম, এর আদি নিবাস রোমানিয়া কাশফুলের শিকড় বা মূলের কারণে ভূমিক্ষয় রোধ হয়। তাছাড়া এর ঔষধি গুণও রয়েছে। সর্বোপরি এর এ্যসথেটিক বিউটি তা সব বয়সের মানব মানবীকে আকর্ষণ করে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর