
কুমিল্লার ওয়ালিয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল মালিক মো: অলি উল্লাহ ভূইয়ার বিরুদ্ধে অর্ধ শতাধিক হজযাত্রীর অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাও: কাজী মো: অলি উল্লাহ ভূইয়া। তার বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধ শতাধিক হজযাত্রীকে হজে নেওয়ার কথা বলে তাদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানে ওমরাহ হজ পাঠানোর কথা বলে ইন্ডিগো এয়ারে যাওয়া এবং কাতার এয়ারে আসার কথা বলে ১২ জন ওমরাহ হজযাত্রীকে প্রতারণা করে ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ ৩২ জন হজগামী যাত্রীকে ওমরাহ হজে নেওয়ার জন্য ৩৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ইপিজেড ফাঁড়িতে একটি অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মাও: ইব্রাহিম সিরাজ।
ভুক্তভোগী মাও: ইব্রাহিম সিরাজীর অভিযোগ, মধ্যম আশ্রাফপুর শাপলা মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অফিস খুলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে হজে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাত করে আসছেন অলি উল্লাহ। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ইপিজেড এলাকার বিভিন্ন নারী-পুরুষকে ভুয়া বিবাহ করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইব্রাহিম সিরাজীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, সুমাইয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাও: ইব্রাহিম সিরাজীর সাথে ওয়ালিয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল মালিক ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাও: কাজী মো: অলি উল্লাহ ভূইয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একসময় অলি উল্লাহ সিরাজীকে বিশ্বাস করে ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ ৩২ জন হজগামী যাত্রীকে ওমরাহ হজে নেওয়ার জন্য ৩৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরে অলি উল্লাহ ভূইয়া ৩২ জনকে ১ এপ্রিল ৩২টি ভুয়া বিমানের টিকেট দিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠান। বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে বিমানের টিকেট চেক করতে গেলে সেগুলো ভুয়া প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে অলি উল্লাহ ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তালবাহানা শুরু করেন। এরপর তিন দিন পর আরও ৭ লক্ষ টাকা নিয়ে ৩২ জনকে ৩২টি বিমান টিকেট দেন। পরে ৩২ জন হজযাত্রী ৩ দিন হোটেলে নিজ খরচে থাকা-খাওয়া করে বহু কষ্টে দিন অতিবাহিত করেন। ওমরাহ করতে গিয়ে সেখানে অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা, যাতায়াত ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে।
ওমরাহ হজ শেষে কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান লিটনকে বিষয়টি জানালে তিনি গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে বসে ২০২৪ সালের জুন মাসে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার সিটি ব্যাংকের চেক দেন। চেক পাওয়ার পর ব্যাংকে গিয়ে জানা যায়, তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। এখানেও তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। পরে অলি উল্লাহকে বিষয়টি জানালে তিনি পুনরায় তালবাহানা শুরু করেন। এরপর কুমিল্লা বারের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন আবারও সালিশ বৈঠক বসালে তিনি প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং টাকা ফেরত দেবেন বলে ওই সালিশী থেকে চলে আসেন। পরে ইব্রাহিম হুজুর অলি উল্লাহর নিকট টাকার জন্য গেলে তিনি তালবাহানা করতে থাকেন। পরবর্তীতে মাও: ইব্রাহিম সিরাজী ইপিজেড ফাঁড়িতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানে ওমরাহ হজ পাঠানোর কথা বলে ইন্ডিগো এয়ারে যাওয়া এবং কাতার এয়ারে আসার কথা বলে ১২ জন ওমরাহ হজযাত্রীকে ধোঁকা দিয়ে ব্যাংকে RTGS এর মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়। ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত ১২ জন ওমরাহ হজযাত্রীর মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরের হাজি শহীদুল ইসলামের ছেলে আলহাজ্ব মুহাম্মদ ময়নাল হোসেন (৫৪), বুড়িচং উপজেলার জগৎপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের পুত্র আবদুস সামাদ (৭৪), বুড়িচং উপজেলার জগৎপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের পুত্র আবদুল মোনাফ (৭০), বুড়িচং উপজেলার জগৎপুর গ্রামের আবদুল মোনাফের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৬৫), কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরের তালেব হোসেনের ছেলে মোঃ ময়নল হোসেন (৫১), শিদলাই গ্রামের আবুল হাসেম মাস্টারের ছেলে মোঃ মহি উদ্দিন (৪৩), বুড়িচং উপজেলার শোভারামপুর গ্রামে গোলাম আহাম্মদের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬০), শিদলাই গ্রামের মোঃ মহি উদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৩৩), ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরের আবদুল মালেকের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম (৬০), কুমিল্লা সদর উপজেলার কালিয়াজুরী গ্রামের আসমত আলীর পুত্র মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশীদ (৭৫), কুমিল্লা সদর উপজেলার আড়াইওড়া গ্রামের ছায়েদ আলীর পুত্র আলী আশ্রাফ (৭০)।
এ বিষয়টি সৌদি আরবের জেদ্দাস্থ কাতার এয়ারলাইন্স অফিসে টিকেট যাচাই করে জানা যায়, প্রতারক ট্রাভেলস এজেন্সি থেকে সরবরাহকৃত ১২ জন ওমরাহ হজযাত্রীর ফিরতি ফ্লাইট সিডিউল অনুযায়ী ৭ মার্চ ২০২৪ তারিখে ইস্যুকৃত ১২টি টিকেটই ছিল ভুয়া। পরিশেষে কাতার এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত ওমরাহ হজযাত্রীরা নতুন করে গত ১ মার্চ জাজিরা এয়ারলাইন্সের টিকেট কাটতে বাধ্য হন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ওমরাহ হজযাত্রীরা প্রায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা লোকসান গুনতে বাধ্য হন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ট্রাভেলস এজেন্সি "ওয়ালিয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল" এর স্বত্বাধিকারী কাজি মাওলানা ওয়াজি উল্লাহর বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ওমরাহ হজযাত্রীদের পক্ষে দেশে ফিরে মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক হুজুর অভিযোগ করে বলেন, অলি উল্লাহ হুজুর আওয়ামীলীগ আমলে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মানুষের সাথে বহু প্রতারণা করেছেন। বর্তমানে ৫ আগস্টের পরও তিনি তার প্রতারণা বন্ধ করেননি। এখনো তিনি মানুষকে হজে নেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাত করে আসছেন। এ বিষয়ে ইপিজেড ফাঁড়ি ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, "আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। তাদের সাথে বসে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করছি।"
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর