
রৌমারীতে খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ডিলারদের যোগসাজশে খাওয়ার অনুপযোগী ও নিম্নমানের চাল বিতরণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জ্বল কুমার হালদার অভিযান চালিয়ে ময়নাল নামের এক ব্যবসায়ীর চালের গুদামঘর, মের্সাস মুরাদ ট্রেডার্স, সিলগালা করেন। এর আগে তিনি খাদ্যগুদাম ও কয়েকজন ডিলারের ঘর পরিদর্শন করেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৪১ জন ডিলার নিয়োগসহ প্রায় ১২ হাজার উপকারভোগীকে চাল কার্ড দেওয়া হয়েছে। বছরে ৬ বার খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণের কথা রয়েছে। প্রতি মাসে প্রতিটি কার্ডধারী ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। সপ্তাহের সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার এই তিনদিন চাল দেওয়ার কথা রয়েছে। ডিলাররা প্রতি মাসে খাদ্যগুদাম থেকে চাল তুলে নির্ধারিত কেন্দ্রে বিতরণ করবেন।
কিন্তু উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা যে সমস্ত চাল সরবরাহ করেন, তা ৫০ কেজির পুরাতন বস্তা দিলেও বাস্তবে ওজনে কম, খাবার অনুপযোগী ও নিম্নমানের চাল বলে ডিলাররা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ করেন। এর আগে ডিলারদের কাছে আসা কার্ডধারীরাও ওজনে কম, খাবার অনুপযোগী ও নিম্নমানের চালের অভিযোগ করেন। যার প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এই অভিযান পরিচালনা করেন।
দাঁতভাঙ্গা বাজারে ডিলার আল আমিনের নিকট চাল নিতে আসা কার্ডধারী ইউনুস, বকুল মিয়া, ফারুক হোসেন, ইদ্রিস আলী, আব্দুল আউয়াল, হাসান অভিযোগ করে বলেন, ৩০ কেজির জায়গায় ২৮ থেকে ২৯ কেজি চাল দেওয়া হয়। এছাড়া খাবার অনুপযোগী, দুর্গন্ধযুক্ত ও নিম্নমানের চাল দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা নিতে অস্বীকার করলে ডিলাররা খারাপ আচরণ করেন।
এ বিষয়ে ডিলারদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, খাদ্যগুদাম থেকে তাঁদেরকে যে চাল দেওয়া হয়েছে, তা নিম্নমানের। তবে সদরের আশেপাশের খাদ্য কর্মকর্তা তাঁর পছন্দমতো ডিলারদেরকে ভালো চাল দিলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ডিলারদের খাবার অনুপযোগী, দুর্গন্ধযুক্ত ও নিম্নমানের চাল দিয়েছেন। এ বিষয়ে ডিলারদের বক্তব্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে প্রশাসন নড়েবসে।
এদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রৌমারীর মানুষ খুব সহজ-সরল, এই সুযোগে খাদ্য কর্মকর্তা ও ডিলারদের যোগসাজশে নিম্নমানের চাল বিতরণ করছেন। তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানান।
খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ বলেন, তাঁর এখান থেকে ডিলারদের নামে যে সব চাল সরবরাহ করা হয়েছে তা ভালো। খারাপ ও নিম্নমানের চাল তিনি দেননি। তবে ডিলাররা ভালো চাল নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে খারাপ চাল কম দামে কিনে কার্ডধারীদের বিতরণ করতে পারেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, নিম্নমানের চাল বিতরণসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে খাদ্যগুদাম পরিদর্শন ও অভিযান চালান। পরে কয়েকটি ডিলারের ঘর পরিদর্শন ও অভিযান চালিয়ে নিম্নমানের চালের সত্যতা পান। তবে ডিলাররা জানান, খাদ্যকর্মকর্তা তাঁদেরকে এই চাল দিয়েছেন। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রৌমারী বাজারের চাল ব্যবসায়ী ময়নাল হকের চালের গুদাম (মের্সাস মুরাদ ট্রেডার্স) ঘরে অভিযান চালিয়ে সরকারি বস্তাসহ নিম্নমানের চালের সত্যতা পান। দুটি গুদামঘর সিলগালা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর