• ঢাকা
  • ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১ মিনিট পূর্বে
সাহিদুজ্জামান সাহিদ
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:২৪ রাত

মানিকগঞ্জে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ, শিক্ষকদের ক্ষোভ

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

মানিকগঞ্জ পৌরসভার বান্দুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দেলোয়ারা ফেরদৌসীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে চলতি মাসের ৬ সেপ্টেম্বর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী শিক্ষিকারা একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় উপপরিচালক, জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক অভিযোগপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার অনিয়ম ও দুর্নীতি দৃশ্যমান হওয়ায় সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে অন্তর্বিরোধে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পৌরসভার বান্দুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্ব পেয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন দেলোয়ারা ফেরদৌসী। সদর উপজেলার বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে ‘ম্যানেজ’ করে নিজের বাড়ির পাশের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেই দেলোয়ারা ফেরদৌসী অনিয়ম এবং দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

এলাকায় প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে এবং তাঁর আপন চাচা সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ায় দিনের পর দিন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে গেলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনি। অনেক সময় শিক্ষকদের কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে তাঁর নিকটজন হিসেবে পরিচিত সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেনকে দিয়ে হেনস্থা করার ভয়ে চুপ করে থাকতেন। কিন্তু শিক্ষকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এবার মুখ খুলতে রাজি হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকেই পাশেই প্রধান শিক্ষিকার বাসা হওয়ায় সরকারি বিধিমালা না মেনে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে দেলোয়ারা ফেরদৌসী একাধিকবার বাসায় যেতেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী একজন প্রধান শিক্ষকের প্রতিদিন কমপক্ষে দুটি করে ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও বিধি উপেক্ষা করে তিনি সারাদিনে একটি ক্লাস নিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করার সময়ে কোনো সহকারী শিক্ষককে তাঁর সাথে না রেখে এককভাবে করছেন। এতে অনেকবার আর্থিক অস্বচ্ছলতার প্রমাণসহ ধরিয়ে দিলে তিনি শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। বিদ্যালয় ছুটির আগে অথবা পরে হোম ভিজিট করার কথা থাকলেও তিনি বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে হোম ভিজিটে বের হন। টিফিন পিরিয়ডে প্রধান শিক্ষিকা দেলোয়ারা ফেরদৌসীর মতো অনেক শিক্ষার্থী বাসায় গিয়ে পড়ে আর না আসলেও সেই বিষয়ে তাঁর কোনো পদক্ষেপ নেই। চাকরির বিধিমালায় সাময়িক ছুটি বলতে কোনো ছুটি না থাকলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দেলোয়ারা ফেরদৌসী বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে বিদ্যালয় থেকে ছুটি নেন। বিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল শিক্ষক ও শিক্ষিকার উপস্থিতিতে স্টাফ মিটিং করে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি আলোচনা না করে তাঁর মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন। এর ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তথ্য জানা থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়া নানা কারণে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁর সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের অসম্মানজনক ও অশালীন ভাষায় কথা বলে থাকেন, যা বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করে। বরাবরের মতো গত বছরের পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সরকারি অনুদান হিসেবে ২ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা অর্ধেক টাকা খরচ করে বাকি টাকার কোনো হিসাব দেননি। এভাবে প্রতিটি কাজের সরকারি বাজেট আসলে তিনি তাঁর মতো খরচ করে বাকি টাকা লোপাট করে থাকেন। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে যে, প্রতিটি অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রমাণ দেওয়া হয়েছে; এ বিষয়ে তদন্তে আসলে সত্যতা মিলবে।

এদিকে লিখিত অভিযোগের সত্যতা জানতে সম্প্রতি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তিনি দুপুরের খাবার খেতে বাসায় গেছেন প্রায় ঘণ্টাধানেক আগে। এরপর তাঁর মুঠোফোন নম্বরে ফোন দিলে তিনি দ্রুত তাঁর স্বামীকে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন।

এরপর তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "আমি বিদ্যালয়ের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজ করতে গিয়ে আমি সহকর্মীদের শত্রু হয়েছি। এরপরও আমার বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট হলে আমি চাকরি ছেড়ে দেব।" তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ১৪টি অভিযোগের কোনোটির সঠিক জবাব তিনি দিতে পারেননি।

অভিযোগের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সহকারী শিক্ষিকা মুঠোফোনে জানান, "অভিযোগের ঘটনা পুরোপুরি সত্য। বড় আপা (প্রধান শিক্ষিকা) তাঁর মনে যা চায় তিনি তাই করেন। আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। বড় আপার সিদ্ধান্তের বাইরে কথা বলা যায় না। বিদ্যালয়ে তাঁর অনিয়ম দৃশ্যমান হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করলে তিনি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগে হয়রানি করবেন। এ বিষয়ে আপনাদের ক্যামেরায় কথা বলতে পারব না, তবে সরকারিভাবে তদন্ত আসলে আমরা কথা বলতে রাজি আছি।"

বান্দুটিয়া এলাকার লাবলু হোসেন বলেন, "বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা আপা গত শুক্রবার আমাদের বিদ্যালয়ে ডেকে পাঠান। আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি বড় আপা বিদ্যালয়ে একাই স্থানীয়দের নিয়ে উপস্থিত আছেন। আমি আপার সব কথা শুনে তাকে বলেছি, আপনি আপনার সহকর্মীদের নিয়ে মিলেমিশে বিদ্যালয়টি ভালো করে পরিচালনা করেন। আপনাদের নিজেদের মধ্যে যদি কোনো বিরোধ থাকে তা মিটিয়ে ফেলুন। তিনি আমাকে একটি সাদা কাগজে সই দিতে বললে আমার সন্দেহ হলে আমি দেইনি। পরে শুনেছি বড় আপা একটি সাদা কাগজে এলাকার অনেকের সই নিয়েছেন। এরপর কী হয়েছে আমি জানি না।"

সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতেই তিনি আটিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বদলি হয়ে চলতি দায়িত্বে বান্দুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হয়ে এসেছেন। এখানে আমার কোনো হাত নেই।"

তিনি আরো বলেন, "অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে বিষয়টি তদন্তের জন্য বলেছেন।"

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গকুল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, "এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আগামীকাল বুধবার ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দেলোয়ারা ফেরদৌসীসহ অন্যান্য শিক্ষকদের অফিসে ডাকা হয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, "এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ সাহেবকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছি।"

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]