
এক ফোঁটা রক্ত মানে একটি প্রাণের আশার আলো। কিন্তু সেই রক্তে যদি স্যালাইন মেশানো থাকে, তা রোগীর জন্য হতে পারে প্রাণঘাতী। তবুও থেমে নেই এই অপতৎপরতা।
রাজধানীর বেসরকারি কিছু ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রক্তের ব্যাগে এভাবেই দেদারসে মেশাচ্ছে স্যালাইন। এসব মানহীন রক্ত বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকায়। শুধু তাই নয়, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতের জন্য সংগ্রহ করা রক্ত চড়া দামে বিক্রি করা হয় বাইরে।
দেশের চিকিৎসা সেবার কেন্দ্রস্থল রাজধানী ঢাকা। অধিকাংশ মুমূর্ষু রোগীর ঠিকানাই হয় রাজধানীর কোনো না কোনো হাসপাতালে। ফলে সবচেয়ে বেশি রক্তের প্রয়োজন হয় এই শহরেই। কিন্তু মানুষের শরীরে দেওয়া রক্তগুলোতে আসলেই কি রক্ত থাকে?
বেসরকারি ব্লাড ব্যাংকের রক্ত কতটা মানহীন তা দেখতে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় একব্যাগ ‘ও নেগেটিভ’ রক্ত সংগ্রহ করা হয় গ্রীন রোডের নিরাপদ ব্লাড ব্যাংক থেকে।
সেই রক্ত পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয় সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। পরীক্ষার পর দেখা গেল ব্যাগে রক্তের চেয়ে স্যালাইনের পরিমাণই বেশি।
এ বিষয়ে এনআইসিআরএইচের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফারহানা ইসলাম বলেন, ‘এটাতো স্যালাইন। স্যালাইন মেশানো। এক ব্যাগকে অন্তত দুই ব্যাগে পরিণত করা হয়েছে। স্যালাইন দিয়ে এ ব্যাগটা তৈরি করা হয়েছে।’
শুধুই এই ব্লাড ব্যাংক নয়, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আগুনে পোড়া রোগীর জন্য বাংলাদেশ ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন সেন্টার থেকে দুই ব্যাগ ‘এ পজেটিভ’ রক্ত কিনে এনেছিলেন রোগীর স্বজন সঞ্জীপন পাল। পরীক্ষা করে দেখা গেল সেটিও রোগীর শরীরে দেওয়ার উপযোগী নয়।
প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই রক্ত চেক করে আমাদের মনে হয়েছে যে, এই রক্তটা আমরা ব্যাবহার করতে পারব না।’
রক্ত নিয়ে কতটা ভয়াবহ বাণিজ্য হতে পারে তা দেখা গেল মাইলস্টোনের বিমান দুর্ঘটনার পর। সেখানে সংগ্রহ করা রক্ত মাইলস্টোনের রোগীদের না দিয়ে ১৫শ-১৮ টাকায় বিক্রির করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রিদম ব্লাড ব্যাংকের বিরুদ্ধে।
একজন রক্তদাতা বলেন, ‘এটা তো বিক্রি করার জন্য আমরা দেইনি। আমরা দিয়েছি মানুষের উপকারের স্বার্থে। যেন একজনের জীবন বাঁচে।’
এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ বিভাগের পরিচালক আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘মাইলস্টোনের যে ভুক্তভোগী তাদেরকে নিয়ে ব্যবসা করা বা প্রতারণার সুযোগ আমরা কখনোই দেইনি। আপনার কাছে থেকে আমি তথ্য নেব। যদি এরকম প্রমাণ থাকে, অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজধানীতে প্রায় শতাধিক বেসরকারি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে যার অধিকাংশই মানছে না সরকারের নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন ২০০৮।
সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর