
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের মোট প্রায় ১১ কোটি টাকার দুটি ল্যাব মেশিনে হয়নি একটিও পরীক্ষা ও সিএসআরআইএল-র প্রায় ৫ কোটির একটি মেশিনে এক বছরে মাত্র ২৫ টি স্যাম্পল টেস্ট হয়েছে । ল্যাবের অত্যাধুনিক এসব যন্ত্র পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়নি কোনো বিদেশি প্রশিক্ষণ ও কেমিক্যাল। যন্ত্রপাতির কোম্পানি থেকে কমিশন নেওয়ার গুঞ্জন, ল্যাবের যন্ত্র পরিচালনার জন্য বিদেশি প্রশিক্ষণ না দেওয়া, কেমিক্যাল সরবরাহ না করা ও অডিট অফিসারের বাসায় থেকে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রকৌশলী নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারের নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং (এনজিএস) ও কনফোকাল মাইক্রোস্কোপ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করে গতবছরের ৫ আগস্টের কয়েকদিন পূর্বে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এ দুটি মেশিনে হয়নি কোনো টেস্ট। এছাড়া এনজিএস মেশিনের সংশ্লিষ্ট কেমিক্যালও সরবরাহ করা হয়নি। যার ফলে এনজিএস-এ করা যাচ্ছে না কোনো টেস্ট। এছাড়া যবিপ্রবির সেন্টার ফর সফস্টিকেটেড ইনস্ট্রুমেন্টেশন অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাবরেটোরি (সিএসআরআইএল) এর প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি-মাস স্পেকট্রোমেট্রি (এলসি-এমএস) মেশিনের প্রতিদিন ১০-১২টি স্যাম্পল টেস্ট করার সক্ষমতা থাকলেও একবছরে মাত্র ২৫-৩০টি টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এলসি-এমএস মেশিনে স্যাম্পলের রেজাল্টের ত্রুটির অভিযোগও রয়েছে। কোটি কোটি টাকার মূল্যের অত্যাধুনিক মেশিন তিনটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিদেশি প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও একবছরেও সম্পন্ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া সিএসআইআরএল'র অ্যামিনো এসিড অ্যানালাইজার মেশিন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নষ্ট। যার ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অ্যামিনো এসিড টেস্ট নিয়ে বিপাকে থাকার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নিত্য প্রয়োজনীয় ল্যাব ইন্সট্রুমেন্ট ও মেশিন মাসের পর মাস নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও এসব যন্ত্রপাতি মেরামত না করার অভিযোগ রয়েছে।ফলে থমকে আছে প্রতিদিনের ল্যাব ক্লাস ও গবেষণা।
যবিপ্রবির মাস্টার্স শিক্ষার্থী খালিদ হাসান বলেন, কোটি টাকার যন্ত্র কিনেও ব্যবহার না করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা এবং কেনাকাটায় প্রকৌশলীর কমিশন নেওয়া স্পষ্ট দুর্নীতি। প্রতিটি টেস্টে কমিশন দেওয়ার কারণে গবেষণার ব্যয় অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে, যা দ্রুত বন্ধ করা জরুরি। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের ল্যাবের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি মাসের পর মাস অচল থাকায় গবেষণা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে সিএসআইআরএলের অ্যামিনো এসিড অ্যানাইলাইজার নষ্ট থাকায় স্যাম্পল নষ্ট হচ্ছে। এর দায় অবশ্যই প্রশাসনকেই নিতে হবে।
এদিকে জিনোম সেন্টারের এনজিএস, কনফোকাল ও সিএসআইআরএলের এলসি-এমএস সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বিদেশি প্রশিক্ষণ না দেওয়া ও কেমিক্যাল সরবরাহ না করার অভিযোগ রয়েছে প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রকৌশলী নাজমুস সাকিবের নামে। এছাড়া ল্যাব ইনস্ট্রুমেন্ট কেনার সময় সরবরাহকৃত কোম্পানি থেকে ১০ভাগ কমিশন নেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে একবছর পূর্বে অডিট কর্মকর্তার বাসায় থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ইঞ্জি. নাজমুস সাকিব বলেন, এ মাসের শেষের দিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। আর কমিশন গ্রহণের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এছাড়া অডিট অফিসারের সাথে ঘটনাটি এক বছর পূর্বের। এখন এ ঘটনা সামনে আসা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
জিনোম সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, কনফোকাল মাইক্রোসকোপটি সচল আছে। এখন পর্যন্ত কোনো স্যাম্পল না আসায় কোনো টেস্ট হয়নি। এনজিএস চালানোর জন্য কিছু রিএজেন্ট দরকার, যা আমরা কোম্পানিকে বলেছি। রিএজেন্ট পেলেই আমরা এনজিএস মেশিনে স্যাম্পল টেস্ট করতে পারব। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ইন্ডাস্ট্রিয়াল নিয়মানুসারেই শিক্ষক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের কমিশন দেওয়া হয়।
সিএসআইআরএল এর ডেপুটি ডিরেক্টর ড. মোঃ ওমর ফারুক বলেন, এলসি-এমএস এ টেস্ট একটি ব্যয়বহুল পরীক্ষা। যদি স্যাম্পল না আসে তহলে আমাদের কি করার আছে? আমরা শিক্ষকদের কাছে পৌছানোর চেষ্টা করছি যাতে এলসি-এমএস এর জন্য আমাদের কাছে স্যাম্পল পাঠায়।
সার্বিক বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, এনজিএস, এলসি-এমএস ও কনফোকাল সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য এ মাসের শেষে একটি দলকে বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যেই দেশীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি হওয়ায় সেগুলো নষ্ট হলে প্রয়োজনীয় পার্টস দেশে সহজলভ্য নয়, ফলে মেরামতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তবুও এসব যন্ত্র সচল রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর