
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে আজ এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শিল্প বিপ্লবের বিশ্বনেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগণ্য অবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ ১১টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের নামে ১১টি দেশের শিক্ষক ও শিক্ষাকোর্স সমন্বয়ে ১১টি জেলায় ১১টি শিল্প বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশ শিল্প ও উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবী সমাজ অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনায় বক্তারা ২৫ দফা দাবি উপস্থাপন করেন, যা রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রণীত। দাবিগুলো হলো:
১. ১১টি দেশে ২০০/৩০০ একর কৃষি জমি ৫০/৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে বাংলাদেশি শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিদেশে ১ মাসের শিল্প শিক্ষা সফর/প্রশিক্ষণের সময় সেখানে কর্মযুক্ত কৃষি কাজ করে সফরের খরচ মেটানো।
২. বিদ্যুৎ শিল্প ব্যাংক, গার্মেন্টস শিল্প ব্যাংক, উপজেলা ক্ষুদ্র শিল্প ব্যাংক, সিটি কর্পোরেশন ক্ষুদ্র শিল্প ব্যাংক প্রতিষ্ঠা।
৩. ৫৬৪টি উপজেলায় শিল্প স্কুল ও শিল্প কলেজ প্রতিষ্ঠা। মডেল মাদ্রাসা ও প্রকৌশল, মেডিকেলসহ ইসলামী মডেল বিশ্ববিদ্যালয়।
৪. ৫৬৪টি উপজেলায় শিল্প কর্মকর্তা বিসিএস ক্যাডার পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ। সিটি কর্পোরেশনে শিল্প কর্মকর্তা, ইউনিয়নে পল্লী শিল্প কর্মকর্তা।
৫. নারায়ণগঞ্জকে নিটওয়্যার রাজধানী, নরসিংদীকে টেক্সটাইল রাজধানী, গাজীপুরকে গার্মেন্টস রাজধানী ও শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়।
৬. কোম্পানীগঞ্জ সোনাগাজী নদীবন্দরকে সমুদ্রবন্দর, নোয়াখালী, বগুড়া, কুষ্টিয়া বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন।
৭. মক্কা-মদিনায় মুসলিম জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশে ঢাকায় ইসলামী ইউনিয়ন প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠা (ওআইসি'র ৫৭টি দেশ সমন্বয়ে)।
৮. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সমস্ত অনার্স কলেজে ক্ষুদ্র শিল্প অ্যাসেম্বলিং বিভাগ চালু করা যেতে পারে ঘরে ঘরে শিল্প বিপ্লবের জন্য।
৯. দেশের সমস্ত ইউনিয়নে প্রাইমারী/হাই স্কুল ভবনে নৈশকালীন ৩ মাসের শিল্প ট্রেড কোর্স চালু করা যেতে পারে।
১০. বিশ্ববিদ্যালয়/অনার্স ছাত্রদের শিল্প প্রশিক্ষণ ও শিল্প ঋণ দেওয়া হোক।
১১. ঢাকাস্থ জাপান, জার্মানি, কোরিয়া, রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রিটেন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দেশের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহায়তায় নগর ভবন বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিল্প অ্যাসেম্বলিংয়ের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
১২. প্রস্তাবিত প্রবাসী চেয়ারম্যানের সহায়তায় চীন, জাপানের ন্যায় বাসায় তৈরি শিল্প পণ্য বিদেশে রপ্তানির সহায়ক পরিবেশের জন্য, প্রস্তাবিত উপজেলা শিল্প মার্কেট, শিল্প প্রশিক্ষণ ও শিল্প তথ্য কেন্দ্র এবং সিটি কর্পোরেশন শিল্প মার্কেট, শিল্প প্রশিক্ষণ ও শিল্প কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে সহায়তা করা যেতে পারে।
১৩. জাপান, জার্মানি, চীন, ইউরোপের সহায়তায় দেশে বাস, ট্রাক, কার, জিপ, মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি তৈরি ও রপ্তানি করতে হবে। মুসলিম লীগ সরকারের সময় প্রতিষ্ঠিত প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিকে আধুনিকায়ন করতে হবে। টঙ্গী টেলিফোন শিল্প সংস্থা আধুনিকায়ন করতে হবে।
১৪. নেপালে বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ উদ্যোগে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাংলাদেশে আনতে হবে (কম খরচে)। মুসলিম লীগ সরকারের প্রতিষ্ঠিত কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ন্যায়।
১৫. জাপান, জার্মানি, রাশিয়ার পাওয়ার স্টেশন মেশিনারিতে -ওমান, সৌদি আরব বা ইরানের তৈলে, বাংলাদেশের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পরিচালনায়, দুই বা তিন দেশের যৌথ উদ্যোগে আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রয় ব্যবসা করতে হবে। মুসলিম লীগ সরকারের নির্মিত সিদ্ধিরগঞ্জ ১০ মেগাওয়াট, ৩০ মেগাওয়াট ডিজেল পাওয়ার স্টেশনের ন্যায়, আধুনিক রূপে।
১৬. সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, আবুধাবি, লিবিয়া, ওমান ইত্যাদি মধ্যপ্রাচ্যের দেশে-তাদের দেশের বিল্ডিং নির্মাণ কাজ, রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণ কাজ, ইলেকট্রিক লাইন ও সাব স্টেশন নির্মাণ কাজ, সাব কন্ট্রাক্ট করে/মেইন কন্ট্রাক্ট করে, PDB, DPDC, PWD, সড়ক ও জনপথ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৌশল শাখা, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাজ করতে পাঠিয়ে মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার আয় করতে হবে। সংশ্লিষ্ট শিল্প পণ্য রপ্তানি করতে হবে।
১৭. বাংলাদেশ পাওয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউট (BPRI) প্রতিষ্ঠা করে, উৎপাদিত বিদ্যুৎ শিল্প পণ্যের সনদ দিয়ে, বাংলাদেশ থেকে পাওয়ার ট্রান্সফরমার, ইলেকট্রিক ক্যাবলসহ বৈদ্যুতিক শিল্প পণ্য বহিঃবিশ্বে রপ্তানি করার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৮. সরকারি উদ্যোগে আম, আনারস, লিচু, কলা, কমলা, তরমুজ সহ ফল, ফসল ইত্যাদির জুস, জেলি তৈরির প্ল্যান্ট করে - সম্মানিত কৃষকদের, নির্দিষ্ট প্রসেস ফি নিয়ে, কৃষি খাদ্য শিল্পপতি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। যেমনটি রাইস মিলে ধান ভাঙালে ফি দিতে হয় কৃষককে। জনগণের ক্রয় ক্ষমতা ও আয় বাড়বে। প্রযুক্তি জ্ঞান বাড়বে। সম্মানিত কৃষকগণ দেশে খাদ্য শিল্প পণ্য বিক্রয় ও বিদেশে রপ্তানি করবেন। কৃষক হবেন কৃষি খাদ্য শিল্পপতি। অর্থনৈতিক শিল্প আয় বাড়বে। কৃষি শ্রমের সুখী মূল্যায়ন হবে।
১৯. সরকারি উদ্যোগে গরুর মাংস, মুরগির মাংস, মাছ, খাসির মাংস ইত্যাদি টিনজাত, প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়া জাত করার প্ল্যান্ট নির্মাণ করে দিতে হবে। মালয়েশিয়ার ন্যায়। উৎপাদনকারী তাঁর পণ্য নিয়ে এসে - ফি দিয়ে প্যাকেটজাত, প্রক্রিয়াজাত সরকারি প্ল্যান্ট থেকে করে নিয়ে, নিজেই দেশে বিক্রয় করবে। বিদেশে রপ্তানিতে সহায়তা করতে হবে।
২০. ভবিষ্যতে রাশিয়ার বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজের, বাংলাদেশি প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দিয়ে বাংলাদেশের সাব কন্ট্রাক্ট কাজ করতে হবে (৩০/৫০ হাজার কোটি টাকার কাজ)। (যেমনটি বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভারত প্রায় ৪০/৫০ হাজার কোটি টাকার সাব কন্ট্রাক্ট কাজ করে আয় করেছিল)। ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ঋণগ্রস্ত থাকলো বাংলাদেশের জনগণ। সম্মান ও আয় করলো ভারত।
২১. বাংলাদেশে বিদেশি প্রযুক্তিতে উৎপাদিত শিল্প পণ্য - জাপান, জার্মানি, চীন, কোরিয়ার ন্যায় বহিঃবিশ্বে রপ্তানি করে মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার আয় করতে হবে। বিশ্ব উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে।
২২. ৫৬৪টি উপজেলার ২/৩টি ইউনিয়নের কেন্দ্রস্থলে ১টি করে দাতব্য চিকিৎসালয় বা পল্লী চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্য সেবার জন্য। যেখানে ১ জন MBBS ডাক্তার পোস্টিং থাকবে, সংশ্লিষ্ট সহকারীসহ। মুসলিম লীগ সরকারের প্রতিষ্ঠিত, বামনী দাতব্য চিকিৎসালয়, কোম্পানিগঞ্জ নোয়াখালীর ন্যায়।
২৩. এয়ারফোর্স ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মুসলিম লীগ সরকারের প্রতিষ্ঠিত ফৌজদার হাট ক্যাডেট কলেজের ন্যায়।
২৪. এশিয়ান মহিলা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চট্টগ্রামের এশিয়ান মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায়।
২৫. পুরাতন বৃহত্তর ১৭টি জেলায় প্রয়োজন সাপেক্ষে কমপক্ষে ১টি করে এয়ারপোর্ট থাকতে হবে। আমেরিকা ইউরোপ সহ যেই সমস্ত দেশ যত বেশি উন্নত, সেই সমস্ত দেশে তত বেশি সংখ্যক এয়ারপোর্ট আছে। অথবা তৈলের খনি বা প্রযুক্তি শিল্প উন্নত দেশ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যখন বিমান ইন্ডাস্ট্রি হবে, তখন ১৮ কোটি মানুষের ৬৪ জেলায় অনেক এয়ারপোর্ট থাকতে পারে। সময় ও মেধাকে উন্নয়নের কাজে সম্পৃক্ত করতে এবং বিশ্ব উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে। আমেরিকাতে ২ বা ৩ সিট বিশিষ্ট অনেক বিমান আছে। যাহা মার্কেট থেকে বিমানের খুচরা পার্টস ক্রয় করে এনে, অনেকে বিমান অ্যাসেম্বলিং করে, নিজের বিমান নিজে পরিচালনা করে থাকেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভাইস চেয়ারম্যান জনাব শামসুজ্জামান দুদু। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন (নারায়ণগঞ্জ), বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ আর খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের লেকচারার মিজ তানজিনা বিনতে নূর, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. হুমায়ুন কবির, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব জনাব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ স্টীল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও শাহরিয়ার স্টিল গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব মাসাদুল আলম মাসুদ, FBCCI-এর সাবেক উপদেষ্টা ও জাপান-বাংলাদেশ সিসিআই-এর সাবেক সভাপতি জনাব আব্দুল হক, বিএনপি-ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-এর সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আলহাজ্ব নবী উল্লাহ নবী, MY TV-এর হেড অব দি প্রোডাকশন জনাব আব্দুল্লাহিল কাফি, GTV-এর প্রোগ্রাম প্রযোজক জনাব এইচ এম তানভির হাসান, এখনTV-এর সিনিয়র রিপোর্টার (পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়, চীন ও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী) জনাব বেলায়েত হোসাইন, ডাকসু ২০২৫-এর ভিপি পদপ্রার্থী (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) জনাব আবু তৈয়ব হাবিলদার সহ আরও অনেক নেতৃবৃন্দ।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর