
আসন্ন দুর্গাপূজায় দেশের ২৯টি জেলা ‘ঝুঁকিপ্রবণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নাগরিক উদ্যোগে নবগঠিত সংগঠন ‘সম্প্রীতি যাত্রা’।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দেশের ২৯টি জেলা ঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি জেলা উচ্চঝুঁকিতে এবং ২৪টি মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে। কেবল গত বছর আগস্ট থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে ৮০টি মাজার বা দরগাহে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি কুমিল্লা ও রাজবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুর, মাজার ভাঙা এবং এমনকি কবর থেকে লাশ তুলে পোড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতারা।
তারা আসন্ন দুর্গাপূজা ও সাম্প্রদায়িক হামলার আশঙ্কা ঘিরে মসজিদ, মন্দির, মাজার, আখড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মীর হুযাইফা আল-মামদূহ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পরিকল্পিতভাবে এই সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রচেষ্টা চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে মন্দির, মাজার, আখড়া, এমনকি বাউল আসরে হামলা বেড়েছে। কেবল মন্দির নয়, হিন্দু, সুফি, বাউল ও আদিবাসীসহ নানা প্রান্তিক গোষ্ঠী একযোগে ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, ‘রাষ্ট্র চাইলে দাঙ্গা হয় না। কিন্তু এখনো হাজারো নিপীড়নের বিচার হয়নি। হামলার ঘটনায় দায়মুক্তি দেওয়ায় অপরাধীরা উৎসাহিত হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রীতি যাত্রায় একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘সম্প্রীতি কমিটি’ গঠন; বিশেষ মনিটরিং টিম গড়ে তুলে হামলার ঘটনা নথিভুক্ত করা; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ঠেকাতে ফ্যাক্টচেক টিম সক্রিয় করা; ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও উপাসনালয়ের জন্য দ্রুত সহায়তা কাঠামো তৈরি; নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ ও সরকারের কাছে নীতি প্রস্তাব জমা।
সংগঠনটি জনগণকে গুজব প্রতিরোধে সচেতন হতে, ঘটনার প্রমাণ সংরক্ষণ করতে ও স্থানীয় সম্প্রীতি কমিটিতে সক্রিয় হতে আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় মসজিদ, মন্দির ও মাজারের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি সরকারের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরে। এর মধ্যে আছে ঝুঁকিপূর্ণ জেলায় পূজা ও ওরসকেন্দ্রিক সময় অতিরিক্ত পুলিশ ও দ্রুত রেসপন্স টিম মোতায়েন, উপজেলা পর্যায়ে তথ্য যাচাই টিম গঠন করে গুজবের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, থানায় অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ, মসজিদ-মন্দির-মাজারে সিসিটিভি, নিরাপদ প্রবেশদ্বার ও জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসার জন্য জরুরি সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর