• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৪ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:১৩ দুপুর

অস্ত্রের মহড়া দিয়ে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি দখল

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি একের পর এক দখল হয়ে যাচ্ছে দোকানপাটে। হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা, পরিবেশ আইন, কিংবা উচ্ছেদ অভিযানের তোয়াক্কা না করেই গত দুদিনে কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে রাতারাতি শতাধিক নতুন দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এই দখল কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

অভিযোগ আছে, কক্সবাজারের বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন সৈকতে ৩০০ নতুন কার্ড অনুমোদন দিয়ে প্রায় ৯ কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। পরিবেশ আন্দোলনের নেতা করিম উল্লাহর দাবি, প্রতিটি কার্ডের জন্য ৩ লাখ টাকা করে নেওয়া হয় এবং এই প্রক্রিয়ায় অভিনন্দনদাতারাও প্রায় ৯০ লাখ টাকা ভাগ পেয়েছেন।

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল সরকার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। সেই গেজেটে বালিয়াড়ি ও সৈকতের বেলাভূমিতে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) হাইকোর্টে রিট করলে আদালত ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ ঘোষণা করে জোয়ার-ভাটার লাইন থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণে কড়া নিষেধাজ্ঞা দেয়।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেলা হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের নোটিশ দিলে জেলা প্রশাসন লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালায়। তখন প্রায় হাজারো দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক দিনের মাথায় সেই দোকানগুলো আবারও বসানো হয়। এবার উচ্ছেদ হওয়া দোকানের পাশাপাশি নতুন করে আরও শতাধিক দোকান তৈরি হচ্ছে- এমনটাই জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।

শুক্রবার রাত থেকে কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে দোকান বসানো শুরু হয়। শনিবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন বসানো দোকানগুলো একই ধরণের রঙ ও নকশায় তৈরি। এতে বোঝা যাচ্ছে পরিকল্পিতভাবে একটি গোষ্ঠী এ কাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, রাতের আঁধারে দোকান বসাতে গিয়ে দখলদাররা অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “কেউ বাধা দিতে গেলে গুলির ভয় দেখানো হয়েছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি।

তারেক নামের এক দোকানদার সরাসরি স্বীকার করেছেন, তিনি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতিপত্র কিনেছেন। তার ভাষ্য, প্রশাসনকে টাকা দিয়েই দোকান বসানোর অনুমতি পেয়েছি। তবে অনুমতিপত্রে শর্ত আছে- বালিয়াড়ি বা পরিবেশ নষ্ট করে কোনো দোকান বসানো যাবে না। সেই শর্তের তোয়াক্কা না করে দখল চলছে বলেই অভিযোগ উঠছে।

দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা কক্সবাজারে আসেন মূলত সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু হঠাৎ করেই শত শত দোকান বসে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।

রাজধানী থেকে আসা পর্যটক হুমায়ূন আহমেদ বলেন, ভাই, এসব দেখার কেউ আছে? নিঃশ্বাস ফেলার জন্য সৈকতে এসেছি, কিন্তু চারপাশ এখন জঞ্জালে ভরে গেছে।

সুগন্ধা ঝিনুক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল উদ্দিন প্রশ্ন তুলেছেন অনুমতিপত্র নিয়েই। তিনি বলেন, যদি বৈধ হন তাহলে রাতের আধাঁরে কেন দোকান বসাতে হবে? এটা স্পষ্ট অন্যায়। একটি দলের সুবিধাভোগী একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে দোকান বসাচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আলোচিত দুই ব্যক্তি- জাকির হোসেন এবং নূরুল হুদা ওরফে গুরামিয়া- এই দখলযজ্ঞের মূল নিয়ন্ত্রক। সম্প্রতি তারা নতুন করে ৭৪টি কার্ড কিনে রাতের আঁধারে দোকান বসানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নুরুল হুদা। আরেক অভিযুক্ত জাকির হোসেন দাবি করেছেন, তার কেবল একটি দোকান আছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পদে সম্প্রতি বদলি হয়েছে। নতুন জেলা প্রশাসক এখনো যোগদান করেননি। পরিবেশবাদীদের মতে, এই শূন্যতার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সিন্ডিকেট। বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, নতুন ডিসি না আসায় গোপন অনুমতি নিয়ে দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

পরিবেশ আন্দোলনের নেতা করিম উল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, কক্সবাজারের বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের ‘শেষ ইনকাম’ ছিল সৈকতের কার্ড ব্যবসা। তিনি যাওয়ার আগে বীচ এলাকায় ৩০০ নতুন কার্ড অনুমোদন দিয়েছেন। প্রতিটি কার্ডের জন্য ৩ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মোট ৯ কোটি টাকার কার্ড বাণিজ্য হয়েছে।

করিম উল্লাহ আরও দাবি করেন, এই কার্ড অনুমোদনের ঘটনায় যারা বিদায়ী ডিসিকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তারাও অংশ পেয়েছেন। তাদের হাতে গেছে প্রায় ১০ শতাংশ, অর্থাৎ ৯০ লাখ টাকা।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান অবশ্য দাবি করেন, দোকান বসানো ব্যক্তিদের কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। তার ভাষ্য, অবৈধভাবে দোকান বসানোর কোনো সুযোগ নেই। অনুমতিপত্রে স্পষ্ট শর্ত আছে- বালিয়াড়ি দখল করা যাবে না।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানিয়েছেন, সৈকতের বালিয়াড়িতে দোকান বসানো সমর্থনযোগ্য নয়। তাদের কাগজপত্র যাচাই চলছে। বৈধ হলে প্রশাসন কোথায় বসবে নির্ধারণ করবে। তবে বালিয়াড়িতে বসানো দোকান অবশ্যই সরিয়ে নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এক অমূল্য সম্পদ। এগুলো সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কা ঠেকায়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে উপকূলকে রক্ষা করে। অথচ এসব বালিয়াড়ি দখল করে দোকান বসানো হলে একদিকে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে পর্যটন শিল্পও বড় সংকটে পড়বে।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com