• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩৪ সেকেন্ড পূর্বে
আরিফ জাওয়াদ
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:৪০ দুপুর

ডাকসু নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে ছাত্রদলের ১১ অভিযোগ

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতির ১১টি অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।

সেখানে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানভীর বারী হামিম বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ জানালেও প্রশাসন সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি। তারপরও শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা ও আস্থায় আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। জয়-পরাজয় যাই হোক, আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকব।

ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন শেষ হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। লিখিতভাবে অভিযোগ জানালেও আমাদেরকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরছি।

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ১১টি অভিযোগ হলো—

১. ভোটারকে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ এবং ভোটার উপস্থিত হবার আগেই ভোটার তালিকায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে দেয়া সহ নানাবিধ জালিয়াতির সংবাদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ও ভোট প্রদানের হারে অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা সহ অধিকাংশ প্যানেল এবং একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতোমধ্যেই ভোটার উপস্থিতির তালিকা এবং ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছেন। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন সে বিষয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কালক্ষেপণ করছেন।

২. ২০১৯ সালের সর্বশেষ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ক্রমিক নং না থাকায় ছাত্রলীগ নীরবে ভোট কারচুপির সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিলো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারেও কোন ক্রমিক নম্বর ছিলো না। এছাড়াও ছাপানো ব্যালট পেপারের সংখ্যা, ভোটকেন্দ্রে সরবরাহকৃত, ব্যবহৃত ও বাতিল হওয়া ব্যালট পেপারের সংখ্যা এবং ভোটগ্রহণ শেষে ফেরতকৃত ব্যালট পেপারের সংখ্যা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি বারবার জানতে চাওয়ার পরেও এসংক্রান্ত তথ্যাদি কেন্দ্রে দায়িত্বরত পোলিং এজেন্টদেরকেও জানানো হয়নি। ফলাফল প্রকাশের পর উল্লেখিত অভিযোগগুলো নিয়মানুসারে চিফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর দায়ের করতে গেলে তিনি এসব বিষয়ে ঢাবি প্রশাসনের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ব্যালটপেপার সংক্রান্ত ইস্যুতে একাধিক প্রার্থী ও পোলিং এজেন্ট কর্তৃক যথাযথ প্রক্রিয়ানুসারে অভিযোগ দায়ের করার পরও ঢাবি প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করছে।

৩. নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার কোন প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে সে বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অনিরাপদ ছাপাখানা থেকে ফাঁস হওয়া নকল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির অভিযোগ ইতোমধ্যেই এসেছে। উল্লেখ্য যে, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিপুল সংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়, যেখানে ঢাবি প্রশাসনের কোন নজরদারি ছিলো না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

৪. ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার চারদিন পর, তথা ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ভোট গণনা মেশিন এবং সফটওয়্যারের নির্ভুলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের সময় নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক ও টেকনিশিয়ান উপস্থিত থাকলেও ভোটার ও প্রার্থীদেরকে এ বিষয়ে মোটেও অবহিত করা হয়নি। ভোট গণনার বিষয়ে ইতোমধ্যেই নানান অভিযোগ ও বিতর্ক সামনে এসেছে, কিন্তু একটি কার্যকর গণনা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা গেলে এ ধরণের বিতর্ক তৈরী হতো না।

৪. প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নেয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও ভোটের আগের মধ্যরাতে পোলিং এজেন্টদের তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে প্রার্থীদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের বাদ দেয়া হয়। কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পোলিং এজেন্টদের বাছাই করা হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।

৬. ভোটগ্রহণের আগে পোলিং এজেন্টদেরকে আইডি কার্ড সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা যথাসময়ে সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে অনেক পোলিং এজেন্ট যথাসময়ে ভোটকেন্দ্রের সম্মুখে উপস্থিত হয়েও ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি। এবং অনেক ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের অনুপস্থিতিতে পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থায়ই ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

৭. একটি নির্দিষ্ট প্যানেল বাদে সকল প্রার্থী ও প্যানেলকে জানানো হয়েছে যে ৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। কিন্তু ভোটের দিন দেখা যায় যে, ৮টি ভোটিং এরিয়ায় মোট ১৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। যে কারণে ঐ নির্দিষ্ট প্যানেল ব্যতীত আর কোন প্রার্থী বা প্যানেল ১৮টি কেন্দ্র অনুসারে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেনি।

৮. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক পোলিং অফিসার নিয়োগ করার কথা থাকলেও তাদেরকে ঢাবি প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না থাকায় অধিকাংশ পোলিং অফিসার নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে সাংবাদিকদেরকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভুয়া অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন।

৯. নিরাপত্তা ও ভোট সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কতিপয় অতি উৎসাহী বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সদস্যের ভূমিকা ইতোমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে নিরাপত্তার দায়িত্বরত কতিপয় বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সদস্যের সহায়তায় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ক্যাম্পাসে অবাধে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযোগ এসেছে এবং একাধিক বহিরাগত শিবিরকর্মীকে শিক্ষার্থীরা হাতেনাতে ধরে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করেছে।

১০. ভোটগণনার সময়ে পোলিং এজেন্টদেরকে কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে বাধ্য করা হয়েছে। ভোটগণনা প্রক্রিয়ার সাথে পোলিং এজেন্টদেরকে যথাযথভাবে যুক্ত না করায় এবং গণনাপ্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সকল পোলিং এজেন্ট সহ অধিকাংশ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর না করেই ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন।

১১. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করার কারণে বিভিন্ন অভিযোগ ও বিতর্ক তৈরী হয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ বুথে নির্বাচনের দিন বেলা ১১:৩০টার পর থেকে মার্কার পেন না থাকায় ভোটারদেরকে বলপেন দিয়েই ব্যালট পেপারে ক্রস চিহ্ন দিতে হয়েছে। বলপেনে ক্রস চিহ্ন দেয়া ভোটগুলো ওএমআর মেশিন সঠিকভাবে রিড করতে পারেনি বলে অনেক ভোট গণনা করা হয়নি বলে পোলিং এজেন্টরা লক্ষ্য করেছেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরের ভোটগুলোতে বলপেন ব্যাবহার করে পরিকল্পিতভাবে ভোট নষ্ট করার হীন চেষ্টা ছিলো কিনা তা নিয়ে অধিকাংশ প্রার্থীর মনে শংকা তৈরী হয়েছে। এছাড়াও ভোটার চিহ্নিত করার জন্য আঙ্গুলে যে মার্কারের কালি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি অস্থায়ী কালি হওয়ার কারণে একই ব্যক্তি একাধিক ভোট দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, অভিযোগগুলো নিয়ে বারবার অবগত করলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন ইতিহাসে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবে থেকে যাবে।

ফলাফল প্রত্যাখ্যান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফলাফল বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ২০১৯ সালের নির্বাচন নিয়েও যেমন প্রশ্ন আছে, ২০২৫ সালের নির্বাচন নিয়েও আলোচনা চলতে থাকবে, যতদিন না সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে শীর্ষ তিনটি পদসহ ২৩টি পদে জয়ী হয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। বাকি পাঁচ পদে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]