
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রীর অর্থপাচারে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তাদের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। আদালতে জবানবন্দি দেওয়া দুই আসামি হলেন, আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড এজিএম আব্দুল আজিজ ও আরামিট পিএলসি’র এজিএম উৎপল পাল।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোকাররম হোসাইন জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘উৎপল পাল সাবেকমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে সম্পদ কেনা ও দেখভালের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের মূল এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। দুদক তাকে এই প্রক্রিয়ার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এছাড়া আব্দুল আজিজ দেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছিলেন।’’
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিনিয়র চট্টগ্রাম মহানগর স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুর রহমানের আদালত সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করে দুদক। পরে ২১ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
এদিকে, ২১ সেপ্টেম্বর ভোরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকার সিকদার বাড়ি থেকে সাবেক মন্ত্রী জাবেদের বিদেশে থাকা সম্পদের দলিল, ভাড়া আদায় সংক্রান্ত ২৩ বস্তা নথিপত্র জব্দ করে দুদক। বাড়িটি জাবেদের স্ত্রী ইউসিবিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানের গাড়িচালক মো. ইলিয়াছের।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান নথিপত্র প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর জানিয়েছেন, তারা কিছু সম্পদের নাম পেয়েছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তিনটি, মালয়েশিয়ায় দুইটি, থাইল্যান্ডে চার-পাঁচটি সম্পদ আছে জাবেদের। এভাবে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায়ও কিছু কিছু সম্পদ তার নামে রয়েছে। এর আগে, যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি এবং আমেরিকায় ১০টি সম্পদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিলো। এছাড়া দুবাইতে ২২৮টি সহ সব মিলিয়ে কমপক্ষে নয়টি দেশে এ পর্যন্ত তার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাকে আর পরবর্তী সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দেখা যায়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগমুহুর্তে জাবেদ তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর