
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন হাওয়া তুলতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ বেস্ট পলিটিক্যাল পার্টি (বিবিপিপি)। সোমবার রাজধানীর রায়েরবাগ কমপ্লেক্সে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে ১৪ দফা গণদাবি এবং ২৯ দফা ইস্তেহারের আংশিক ঘোষণা করেন পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কাজী রবিউল ইসলাম। তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দিক নির্দেশনা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়—বিবিপিপি গরিব, শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও মধ্যবিত্ত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। তাদের অঙ্গীকার, দেশের কোনো মানুষ আর যেন ঋণের বোঝায় আত্মহত্যা না করে, কেউ যেন গৃহহীন না থাকে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য যেন হয় সবার নাগালের মধ্যে।
সুদমুক্ত ঋণ ও কৃষকের স্বস্তি
দলটির প্রধান দাবির মধ্যে রয়েছে ২ কোটি প্রান্তিক কৃষক ও ২ কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ২০–৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া। পরবর্তীতে আরও ৮ কোটি দরিদ্র পরিবারকে এ সুযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
শ্রমজীবীদের জন্য ফ্ল্যাট, অর্ধেক ভাড়া ও পেনশন
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকায় মাসিক মাত্র এক হাজার টাকায় ব্যাচেলর ফ্ল্যাট এবং আড়াই হাজার টাকায় পারিবারিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। ঢাকার বাইরে এ ভাড়া হবে যথাক্রমে ৫০০ ও ১৫০০ টাকা। একই সঙ্গে শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জন্য মেট্রোরেল, ট্রেন ও বাসভাড়া ৫০% মওকুফ করার ঘোষণা আসে। শ্রমিকদের বার্ধক্যে পেনশন দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে বিবিপিপি।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ‘শূন্য খরচের প্রতিশ্রুতি’
বিবিপিপির ইস্তেহারে বলা হয়, প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত (সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা) ‘শূন্য খরচে শিক্ষা’ নিশ্চিত করা হবে। একইসঙ্গে ১০ হাজার নতুন ডাক্তার ও ৩০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়ে দরিদ্র মানুষের আস্থার স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হবে।
দুর্নীতি দমন ও ন্যায়বিচার
দলটির দাবি, অফিস-আদালত, হাসপাতাল ও থানা থেকে ঘুষ ও দালালি বন্ধ করতে হবে। ৩ হাজার নতুন বিচারক নিয়োগ দিয়ে মামলা জট নিরসনের পরিকল্পনার কথাও জানায় বিবিপিপি।
নারী, রেমিটেন্স যোদ্ধা ও সংখ্যালঘুদের প্রতি গুরুত্ব
বিবিপিপি জানিয়েছে, নারী উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হবে। নারীর ন্যায্য অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ ও প্রতারণামুক্ত বিদেশগমন ব্যবস্থা চালু করা হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, সম্মান ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় কঠোর অবস্থানের কথাও জানায় দলটি।
‘চার শূন্য বাস্তবায়ন’
বিবিপিপির প্রধান লক্ষ্য হলো ‘চার শূন্য’ বাস্তবায়ন—
শূন্য ভূমিহীন-গৃহহীন, শূন্য ভিক্ষুক, শূন্য বেকার, শূন্য দারিদ্র।
জনতার প্রতিক্রিয়া
সংবাদ সম্মেলনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। উপস্থিত শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত অনেকেই বলেন,যদি এসব প্রতিশ্রুতি সত্যিই বাস্তবায়ন হয়, তবে দেশের গরিব মানুষ বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
বাংলাদেশ বেস্ট পলিটিক্যাল পার্টি বিবিপিপি এর ১৪ দফা গণদাবী গুলো হলো:
০১. সুদের চাপে গরীব কৃষক কিডনী বেঁচে, সন্তান বেঁচে, ইজ্জত বেঁচে, আত্মহত্যা করে । এদের ঋণের সুদ আদায় বন্ধ করতে হবে। সুদমুক্ত ঋণ ফাউন্ডেশন গঠন করে ২ কোটি প্রান্তিক কৃষক, ২ কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (চার) কোটি পরিবারকে অবিলম্বে
২০ হাজার টাকা হতে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দিতে হবে।
০২. রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সুদমুক্ত ঋণ ব্যবস্থায় সর্বনিম্ন খরচে বিদেশে যাবার ব্যবস্থা করতে হবে। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবার ব্যবস্থা করতে হবে । বিদেশে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে ।
০৩. নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত কত আয় করে, কয় বেলা খায়? সরকার কী খবর নেয়? কাদের খুশী করতে বেতন বাড়ানো হচ্ছে? মূল্যস্ফিতি কমাতে হবে। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের জন্য মূল্যস্ফিতি ভাতা অবিলম্বে চালু করতে হবে ।
০৪. গার্মেন্টস শ্রমিক, অন্যান্য শ্রমিক, কর্মজীবি মানুষ বাসা বাড়ায় কত ব্যয় করে? । এদের থাকার জন্য ঢাকায় মাসিক ১হাজার টাকায়,ঢাকার বাইরে মাসিক ৫০০ টাকায় এবং পরিবার নিয়ে থাকার জন্য ঢাকায় ২৫০০ টাকায় ঢাকার বাইরে ১৫০০ টাকায় থাকার জন্য বিপুল সংখ্যক ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে হবে । এদের স্বল্পমূল্যে রেশন দিতে হবে । এদের জন্য বাস ভাড়া, ট্রেন ভাড়া, মেট্রো রেল ভাড়া ৫০ % মওকৃষ্ণ করতে হবে । এদেরকে বার্ধক্যে পেনশন দিতে হবে ।
০৫. বার মাস হল পার, স্বার্থ উদ্ধার হল কার? জনগণের কষ্টের টাকায় রাষ্ট্রের চোর পালন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে । দুর্নীতিবাজদের ছাটাই করতে হবে। অফিস আদালত ঘুষ মুক্ত করতে হবে।
০৬. রাষ্ট্রীয় অপচয় বন্ধ করতে হবে। উচ্চাভিলাষি প্রকল্প বাদ দিতে হবে । অকর্মণ্য উপদেষ্টা ছাটাই করতে হবে ।
০৭. কেন এখনো হত্যার উল্লাস চলে, চাঁদাবাজি চলে? সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ধর্ষকদের ধরতে হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পরিবহন, জলমহল, বালুমহল, ঘাট, ফুটপাত, জনপদ অবিলম্বে চাঁদা মুক্ত করতে হবে ।
০৮. খুন,গুম,নির্যাতনের বিচার দ্রুত করতে হবে । আহতদেরপূর্ন সুস্থ্য করতে হবে। সংস্কার দ্রুত করতে হবে । শহীদ ও আহত পরিবারদের সম্মানজনক পুনর্বাসন করতে হবে। যোগ্যদের চাকুরি দিতে হবে ।
০৯. নারী অধিকার লয়ে রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ১/২ জন নারীর ক্ষমতা নারী জাতীর ক্ষমতায়ন নয় । তৃণমুল পর্যায় থেকে সকল নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতা, সম্পত্তির ও নিরাপত্তায় সুরক্ষা দিতে হবে।
১০. দেশের হাসপাতালে জনগনের ভোগান্তি, এ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, রোগী নিয়ে দালালি অবিলম্বে বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে । থানা, হাসপাতাল, ভূমি অফিস, বিআরটিএ, নিম্ন আদালতে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে ।
১১. শিক্ষা ব্যয় মিটাতে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, জনগণ সবাই হতাশ। প্রথম শেণী থেকে ১২তম শেণী পর্যন্ত ( জেনারেল শিক্ষা/মাদ্রাসা শিক্ষা/কারিগরি শিক্ষা) 'শূণ্য খরচে' অধ্যায়নের অধিকার দিতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে । উদ্ভাবন, গবেষণা ও প্রযুক্তি শিক্ষায় গরুত্ব দিতে হবে।
১২. শিল্পপতি, ব্যবসায়ী কেউ ভালো নেই । দেশে বেকার বাড়ছে, আমদানী কমছে। বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই । ব্যবসায়ীর আয় বাড়লে রাষ্ট্রের আয় বাড়ে, কর্মসংস্থান বাড়ে, বৈদেশিক মুদ্রা বাড়ে । যেসব ব্যবসায়ী, শিল্পপতি দোষী নয়, তাদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তাদের টেনশন মুক্ত ব্যবসা করতে দিতে হবে
১৩. রাজনীতিতে টাকাওয়ালা, ক্ষমতাবান, প্রভাবশালীদের একছত্র আধিপত্ত প্রতিষ্ঠিত । গরীব ও মধ্যবিত্তদের স্থান নেই । জাতীয় সংসদে গরীব ও মধ্যবিত্তদের অংশগ্রহণে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের দল নিবন্ধন শর্তাবলী १ (গ) ধারা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
১৪. সীমান্ত হত্যা, অন্যদেশের নাগরিক বাংলাদেশে পুশ করা, করিডোর, বন্দর, সেন্টমার্টিন, পার্বত্য অঞ্চল, বঙ্গোপসাগর, রোহিঙ্গা, এসকল ইস্যুতে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন । রাজনৈতিক দলগুলির সাথে আলোচনা করে সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।
সংবাদ সম্মেলন শেষের সভাপতি বলেন, সকল জনদাবী অবিলম্বে পূরনের উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে এবং সু-শাসন ও বৈষম্য নিরসনে আগামীর নেতৃত্ব দিতে আপনারা সবাই বিবিপিপিতে যোগ দিবেন সে আশা করছি।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর