
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে কলেজের ক্যাম্পাস থেকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কলেজের অধ্যক্ষকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় ধেরুয়া কড়েহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) মো. আনোয়ার হোসেনসহ জড়িতদের গ্রেফতারে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর/২৫) ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনকারী এ কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ এ ঘটনায় গৌরীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ প্রসঙ্গে ধেরুয়া কড়েহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) মো. আনোয়ার হোসেনের মন্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দেওয়া হয় ওয়াটিং ছিলো রিসিভ করেন নাই।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. দিদারুল ইসলাম গণমাধ্যম কে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মারধরের বিষয়ে গোলাম মোহাম্মদ অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, স্কুল চলাকালীন সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন কিভাবে-এখানে আসলেন, সে বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিবো। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া আমীন পাপ্পা গণমাধমকে বলেন, ভিডিওটা আমি দেখেছি। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নিয়ে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কলেজের অধ্যক্ষকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে কলেজের ক্যাম্পাস থেকে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর/২৫) দুপুরে বের করে দিচ্ছেন ধেরুয়া কড়েহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন। এমন একটি ৮ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার প্রতিবাদে নেটজগতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেছেন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীও। এর প্রতিবাদে শুক্রবার ভুটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সামনে মানববন্ধন ও ভুটিয়ারকোনা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে গৌরীপুর পৌর বিএনপির সদস্য সচিব সুজিত কুমার দাস বলেন, এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমরা লজ্জিত। শিক্ষকের মান ক্ষুন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সামনে আমরা দাঁড়াতে পারছি না। আমার সন্তানদের প্রশ্নবানে আমি জর্জরিত হয়ে এ প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। প্রশাসনকে বলতে চাই, আনোয়ার হোসেন মাস্টারসহ জড়িতদের ২৪ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করুন। অন্যথায় এ প্রতিবাদের ভাষাও ভিন্ন হয়ে যাবে। আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, আনোয়ার হোসেনের বিদ্যালয় এ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩কিলোমিটার দূরে। তিনি ছুটি না নিয়ে নিজের স্কুলের পাঠদান বন্ধ রেখে, এখানে কিভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপির সদস্য সচিব সুজিত কুমার দাস, অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কালাম, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ মেম্বার, যুবদল নেতা আলী জাহান, ছাত্র নেতা মো, সেলিম আজাদ, অচিন্তপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. অলি, সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল মান্নান প্রমুখ। অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে থেকে এক প্রতিপক্ষ শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বিনষ্টের পায়তারা চালিয়ে আসছিল। আমি সকালে কলেজে আসি। এরপর দুপুর ১২টার দিকে আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৪/১৫জন অর্তকিতভাবে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে আমাকে এলোপাতাড়িভাবে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে টেঁনে হেঁচড়ে জোরপূর্বক কলেজ থেকে বের করে দেয়। এ সময় তারা আমাকে হত্যারও হুমকি দিয়েছে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় জড়িত আনোয়ার হোসেন, রুমি মিয়া,অলি উল্লাহ, হুমায়ুন তালুকদার, সাইকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম তালুকদারসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘একসঙ্গে স্যারের সঙ্গে ৩০ বছর শিক্ষকতা করছি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি দায়িত্ব নিতে চাইনি। কিন্তু এখানে দুটি পক্ষ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। স্যার তাদের ম্যানেজ করতে ব্যর্থ। স্যারের সঙ্গে একটি ঘৃণিত কাজ হয়েছে। যারা করেছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত।’ জানা গেছে, কলেজের নিয়োগ বাণিজ্য, কমিটি গঠনসহ নানা অনিয়মের বিষয় নিয়ে অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদের অপসারণ দাবিতে গত বছরের জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করে কিছু শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের একাংশ। ৫ আগস্টের পর অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে পদ থেকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ধর্মের শিক্ষক সাজেদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দুটি পক্ষ তৈরি হয়। সাজেদুল ইসলাম গত ১৭ সেপ্টেম্বর গোলাম মোহাম্মদকে আবারও অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। এরপর থেকে স্থানীয় একটি পক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে কলেজে যেতে নিষেধ করে এবং তাঁর কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। মাওহা ইউনিয়ন জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালি উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান,‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে বিষয়টি সমাধান করে স্যারকে কলেজে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তিনি নিয়োগ বাণিজ্যসহ ১৩টি অভিযোগে অভিযুক্ত। তাই মানুষ তাঁকে সহজে মেনে নেবে না এটাই স্বাভাবিক। যখন স্যারকে ধাক্কা দিয়ে আনোয়ার হোসেন বের করছিলেন,তখন আমি বাধা দিয়েছিলাম। এর জন্য দায়ী স্যার নিজেই।’ এ ছাড়া ওয়ালি উল্লাহ অধ্যক্ষের তোলা চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর