
গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(গকসু) নির্বাচনে বিজয়ী হলেও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার জেরে সদস্যপদ বাতিলের ঝুঁকিতে পড়েছেন নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো.রায়হান খান ও সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সামিউল হাসান শোভন।
গকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় সদস্যপদ বাতিলের নিয়মকে সামনে এনে তাদের পদ ও সদস্যপদ বাতিল এবং পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও এজিএস পদে বিজয়ী সামিউল হাসান শোভন শিবিরের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন। আর জিএস পদে বিজয়ী এই বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনকি সদস্যপদ বাতিল হতে পারে বলে জানায়।
গকসুর গঠনতন্ত্রের ১৭.১ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক সংগঠনে যোগ দিলে অথবা ওই সংগঠনের কোনো পদে নির্বাচিত বা মনোনীত হলে তার সদস্যপদ বাতিল হবে। এছাড়া ১১ ধারায় বলা হয়েছে, দলীয় রাজনীতিতে সাথে জড়িত প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছাত্র গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাহী কমিটির যে কোনো পদে নির্বাচনের অযোগ্য হইবেন। আর গঠনতন্ত্রের ১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, গকসু একটি অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ, যা কোনো দলীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর গকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ১১টি পদ ও অনুষদের ১০টি পদে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে জিএস পদে মো. রায়হান খান, এজিএস পদে সামিউল হাসান শোভন ও সহ ক্রীড়া সম্পাদক পদে আব্দুল্লাহ আল নোমান নির্বাচিত হন। নির্বাচনী প্রচারসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে এই তিনজনসহ আরও একজনকে একইসঙ্গে যৌথভাবে দেখা যায়। এমনকি ভোটের দিনও পানির বোতলের বিতরণ করে এর সঙ্গে চারজনের ব্যালট নম্বরসহ প্রচারপত্র বিলি করতে দেখা যায়।
নির্বাচনকালে কোনো প্যানেল ঘোষণা না দিলেও গকসু নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপরই দেখা যায়, ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, গকসুর জিএস, এজিএস শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত। এছাড়া সভাপতি জাহিদুল ইসলাম লিখেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবির চারজন প্রার্থী দিয়েছে,এরমধ্যে তিনজনই জিতেছে। সঙ্গে তারা মো. রায়হান খান, সামিউল হাসান শোভন ও আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছবি যুক্ত করেন। যদিও নুরুল ইসলাম সাদ্দাম পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে দেন। তার পোস্টটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসে শিবিরের প্যানেল নিয়ে সমালোচনা,পুনর্নির্বাচন দাবি এদিকে এসব পোস্ট সামনে আসার পরপরই তৈরি হয়েছে সমালোচনা।
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে তাদের সদস্যপদ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অনেকেই। বলছেন,ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নেওয়া কঠোর নীতির পক্ষে দাঁড়াতে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সত্যিই শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে কিনা, এই ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সেটি প্রমাণ হবে।
জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা বেসরকারি বিশ্বিবদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ-পুসাবের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে লেখা হয়, এ ঘটনায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের মাধ্যমে দলীয় রাজনীতি প্রবেশের ফলে তারা শঙ্কিত।
জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হওয়া আফসানা মিজান মিমি বলেন, অরাজনৈতিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে রাজনীতি নিষিদ্ধ সেখানে একদম প্রকাশ্যে শিবিরের প্যানেল দিয়ে তারা যদি আসে, আমি একমত নই। আমরা প্রতারিত বোধ করছি। গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কোনো রাজনৈতিক দল আসতে পারবে না। সম্পৃক্ত থাকলেও সে বহিষ্কার। আমি এই পদে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাই। যেখানে রাজনীতির সম্পৃক্ততা থাকলে অযোগ্য হবেন, তাহলে তারা কিভাবে এখনও যোগ্য থাকে। যখন জিএসের ফল ঘোষণা করে, তখনই তারা আল্লাহ আকবার, নারায়ে তাকবির স্লোগান দিতে থাকে। তারপরে ঘোষণা হলো। গঠনতন্ত্রের ১৭ এর খ ধারায় আছে, রাজনৈতিক সংগঠনে যোগ দিলে, বা মনোনীত হলে তার সদস্যপদ সরাসরি বাতিল হবে। তাহলে কিভাবে শিবিরের প্যানেলসহ আসতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মুখে কুলুপ জিএসের: শিবিরের সদস্য নন, দাবি এজিএসের এদিকে শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচন,প্যানেল থেকে কতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে জিএস পদে বিজয়ী মো. রায়হান খান বলেন, এই বিষয়ে আপাতত কথা বলতে চাচ্ছি না। কিছু্টা সময় দিলে ভালো হয়। পরবর্তীতে যোগাযোগ করবো। জানাবো। আমি এখন সময় চাচ্ছি।
অন্য দিকে এজিএস প্রার্থী সামিউল হাসান শোভন শিবিরের প্যানেল থেকে নির্বাচনের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। এমনকি তিনি শিবিরের সদস্যও নন বলে দাবি করেন।
সামিউল হাসান শোভন বলেন, শিবির প্যানেল আসলে কিছু না। আমরা এক সঙ্গে কাজ করেছি। আমরা শিবিরের কেউ না। আমি শিবিরের পোস্টেড কেউ না। জিএসের শিবিরের সম্পৃক্ততার বিষয় উনি বলতে পারবেন। আমরা এক সাথে কাজ করেছি এটাই। আমাদের ডিপার্টমেন্টে আলাদা আলাদা কাজ করেছি এই আরকি। আমরা এক সঙ্গে প্রচারণা করেছি এটাই।
যা বলছে প্রশাসন
গকসুর নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল আলম বলেন, সম্পৃক্ততা মানে কি, কোনো প্যানেল বা রাজনৈতিক সদস্য এই ধরনের কোনো তথ্য আসেনি, কোনো অভিযোগ আসেনি। আমরা নির্বাচন করেছি। নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম শেষ করেছি। এখন কিছু সমস্যা এলে তা নির্বাচন কমিশনের বাইরের বিষয়। আমাদের কিছু করার নেই। কে কি করলো, রাজনীতি করছে নাকি দলের তা বলতে পারি না। বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রশাসন দেখবে।
গণ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিণী শিরিন হককে এই বিষয়ে জানতে ফোন করলে তিনি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। আপনি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন। নিয়ম ব্যত্যয় হয়েছে কিনা জানা নেই। হলে তো বিষয় আছে। এই বিষয়ে উপাচার্য, উর্ধতনরা ব্যবস্থা নেবেন।
এই বিষয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আমাদের এখানে দলীয় কোনো নির্বাচন হয়নি। কোনো শাখা নেই কারো। আমাদের কাছে এমন কিছু আসেনি। এখানে রাজনৈতিক কোনো শাখা নেই। কেউ খুলেনি। ফলে এটির সুযোগও নেই।
বিষয়টি নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বিষয়টি নির্বাচন কমিশন দেখবে বলে জানায়। তবে নির্বাচন কমিশনার এই বিষয়টি প্রশাসনের আওতাভুক্ত জানিয়েছেন এমনটি অবহিত করলে তিনি বলেন, ”অফিসিয়ালি তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আমরা এখনও পাইনি। কোনো অভিযোগ যদি আসে আমরা যদি কোনো সত্যতা পাই, সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।”
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর