কক্সবাজার সৈকত তীরের ইকোলুজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়ায় (ইসিএ) বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের দেয়া এক আদেশ গত পাঁচ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের করা একটি সিভিল পিটিশন লিভ-টু-আপীলের (১৩৪৬/২৫) বিপরীতে গত ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ মো. রেজাউল হক এ আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয় কক্সবাজার সৈকত তীরের কলাতলীর ডিভাইন ইকো রিসোর্টের উত্তর-পূর্ব পাশের ইসিএ-তে জনৈক এমদাদ হোসেনের নির্মানাধীন ভবনের কাজ আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আদেশের কপি ভবন নির্মাণকারি এমদাদ হোসেন, জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কউক'সহ সংশ্লিষ্ট সকল শাখায় পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পরও আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনরাত সমানতালে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন অভিযুক্ত এমদাদ হোসেন। আদালতের আদশের পর ইতোমধ্যে দ্বিতীয় তলা সম্পন্ন করে তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
বিষয়টি অবগত হয়ে, সরকার পক্ষে আপীলকারি আইনজীবী হরিদাস পাল গত ১৭ আগস্ট জেলা প্রশাসকসহ কক্সবাজার প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শাখায় একটি আইনী প্রত্যয়ন পাঠিয়েছেন।
সেখানে তিনি লিখেন, এমদান হোসেন পূর্বে যে আদেশে ভবন করছেন সেই আদেশ ২৩ এপ্রিল ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে। এরমধ্যে শুনানী শেষ না হওয়া স্থগিতাদেশ বাড়াতে ১৬ জুন আবেদন করা হয়।
সুপ্রীম কোর্টের ২০০৬ সালের আদেশ মতে, চলমান আপীল শুনানী শেষ না হলে স্থগিতাদেশ বাড়াতে আবেদন করা হলে তা অটো-বর্ধিত বলে গণ্য হয়। সেই মতে এমদাদের ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধের স্থগিতাদেশ চলমান রয়েছে।
সূত্র জানায়, ইসিএ আইন মতে-কক্সবাজার সৈকত হতে উপরে ৩০০ মিটারে নতুন কোন স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ২০১৮ সালে সুপ্রীম কোর্ট আদেশ দেয়। এ নিষেধাজ্ঞা লুকিয়ে বিল্ডিং কোড অমান্য করে ভবন নির্মাণ শুরু করেন এমদাদ হোসেনসহ অনেকে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে তথ্যবহুল সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে অনেকে কাজ বন্ধ করলেও এমদাদ হোসেন চালিয়ে যান। এটি জেনে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা ও শৃংখলাবাহিনীর সহযোগিতায় অভিযান চালায়।
এরপরই প্রশাসনকে ধোকা দিয়ে নির্মাণ অব্যহত রাখতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ গোপন করে চলতি বছরের মার্চ মাসে হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চে রিট পিটিশন (২৬৩৬/২০২৫) করে কাজে বাঁধা না দিতে আদেশ নিয়ে আসেন এমদাদ হোসেন।
বিষয়টি জানতে পেরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের পক্ষে আইনজীবী হরিদাস পাল ২৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চে এমদাদ হোসেনের আদেশের বিরুদ্ধে সিভিল পিটিশন লিভ টু আপীল (১৩৪৬/২০২৫) দায়ের করেন। তা গ্রহণ করে ভবন নির্মাণকারি এমদাদ হোসেনের আদেশটি আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে পিটিশনটি দ্রুত নিষ্পত্তির আদেশ দেন। ৩০ এপ্রিল দেয়া এ আদেশ এমদাদ হোসেন, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়।
এদিকে, আদেশটি পাওয়ার পরও এমদাদ হোসেন দিন-রাত সমানতালে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।
আদালত অবমাননার বিষয়ে অভিযুক্ত ভবন নির্মাণকারি এমদাদ হোসেনকে একাধিকবার কল করা হয়। রিং হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) রিসিভিং শাখা সূত্র জানায়, আপীল বিভাগের কাগজটি তাদের অফিসে এসেছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
তবে আদেশ তামিলের বিষয়ে জানতে কউক চেয়ারম্যান মো. সালাহউদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠালেও রিপলে আসেনি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি, তাই বিষয়টি আগে জানা ছিল না। তবে এখন যেহেতু অবগত হয়েছি, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র মতে, পরিবেশগত বিবেচনায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের ১০ হাজার ৪৬৫ হেক্টর এলাকার প্রাণ বৈচিত্র্য, নির্মল জলরাশি এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকার ১৯৯৯ সালে এ এলাকাকে ইসিএ ঘোষণা করে। এ নির্দেশনা মতে, কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের বদর মোকাম পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত, সৈকতের ঝাউ গাছসমৃদ্ধ ৩০০ মিটার উন্নয়ন নিষিদ্ধ ও ৫০০ মিটার সংরক্ষিত এলাকা। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রীটের বিপরীতে ‘ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ফর কক্সবাজার টাউন এন্ড সি আপ টু টেকনাফ’ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী জোয়ার ভাটার মধ্যবর্তী লাইন থেকে পৌরসভার প্রথম ৩০০ মিটার ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ উল্লেখ করে এ এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেয় উচ্চ আদালত।
এরপর পূর্বে বরাদ্দ পাওয়া খালি অর্ধশতাধিক প্লটের বরাদ্দ বাতিলের করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (কউক) সৈকত হতে ৩০০ মিটারে কোন স্থাপণা নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে প্রচারণা চালায় সেই সময় (২০১৭-২০১৮ সালে)। বাতিল বলে ঘোষণা হয় পূর্বে নেয়া স্থাপণা নির্মাণ অনুমতিও।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর