
পাঁচশো টাকায় সদস্য হলেই মিলবে হাইব্রিড জাতের ২০টি মুরগি, ২১ মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে খাদ্য, ঔষধ এবং ভ্যাকসিন। এই মুরগি ৬০০টি পর্যন্ত ডিম দেবে। আর ১০০ টাকা করে ১০ কিস্তিতে প্রতি সদস্যকে দেওয়া হবে একটি করে মুরগি পালনের দোতলা কাঠের ঘর। ১৩০০ টাকা দিয়ে গ্রুপ লিডার হলেই প্রতি মাসে বেতন পাওয়া যাবে ৫ হাজার টাকা এবং প্রতিটি মুরগি থেকে ১০টি ডিম কমিশন দেওয়া হবে। লিডারকে সঙ্গে সঙ্গেই ৫টি মুরগি প্রদান করা হবে। তাদের দেওয়া মুরগি মারা গেলেই প্রতি মুরগি বাবদ ১ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়া হবে।
ভুক্তভোগীরা জানান, এমনই মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আনুমানিক ২০ হাজার মানুষ কোটি টাকা খুইয়েছেন।
শনিবার সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ‘লেয়ার মুরগি ফার্ম এন্ড হ্যাচারী’ নামে একটি কার্ডে গোপালপুর উপজেলার রামজীবনপুর, বাইশকাইল, পোড়াবাড়ী, উদ্যমপুর বর্ণী, বেলুয়া, নগদা শিমলাসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসব টাকা নেওয়া হয়েছে। কার্ডে প্রোপ্রাইটারের নাম লেখা রয়েছে মোছা. ফাতেমা তুজ-জান্নাত। ঠিকানায় লেখা আছে: সাবগ্রাম, উপজেলা সদর, বগুড়া। কার্ডের গায়ে থাকা নম্বর ০১৭৬৮৮০৫২৯৭, ০১৭৭২৬৪৩৭১১, ০১৯৪৭১২৯৮১৫ বন্ধ পাওয়া গেছে।
রামজীবনপুর গ্রামের মো. শফিকুল ইসলাম জানান, “আমাদের পাড়ায় অন্তত ২৯ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এই চক্র। আমার থেকেও ১ হাজার টাকা নিয়েছে। সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখে দুই জন এসে নগদ টাকা নিয়ে যায়; পরে বিকাশে ০১৭৭৩৯৩৭৩২৫ নম্বরে আরও কয়েকজনের ৪ হাজার টাকা নেয়, এখন ফোন রিসিভ করছে না। ২৫ তারিখ সবাইকে মুরগি ও খাদ্য ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল।”
বাইশকাইল গ্রামের ভ্যানচালক মহির উদ্দিন জানান, “দুই জন লোক এসে বললো, ৩০ জনের গ্রুপ বানাতে পারলে আমাকে মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতন দেবে, খাদ্যের ডিলার বানাবে এবং প্রতিটি মুরগি থেকে ১০টি করে ডিম দেবে। পরে আমাদের গ্রামের ৩২ জনকে সদস্য বানিয়ে দিয়েছে; বিনিময়ে শুধু আমাকে ৫টি মুরগি দিয়েছে। এখন তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। সবাই কষ্ট করে উপার্জিত টাকাগুলো দিয়েছে।”
পোড়াবাড়ী উত্তরপাড়া গ্রামের গৃহবধূ স্বপ্না বেগম বলেন, “দুই জন লোক এসে মুরগিসহ নানা লোভ দেখিয়ে ৩৬ জন মহিলার গ্রুপ বানিয়ে ৫০০ টাকা নিয়েছিল; এখন তারা পলাতক। আমরা চাই দেশের আর কেউ যেন এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে না পড়ে, আমাদের টাকা ফেরত ও প্রতারক চক্রের শাস্তি চাই। তাদের কার্ডে দেওয়া মধুপুরের ঠিকানায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এখন শুনতে পাচ্ছি অনেক গ্রাম থেকেই টাকা নিয়েছে।”
গোপালপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন বলেন, “বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে প্রথম শুনলাম; থানায় এখনো কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। স্বপ্রণোদিতভাবে আমি চেষ্টা করব এই প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনার।”
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর