• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৫ মিনিট পূর্বে
দিলওয়ার খান
বিশেষ প্রতিনিধি, নেত্রকোনা
প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৫:২০ বিকাল

নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টি পেল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

নেত্রকোণার ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি এখন জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। আকারে বালিশের মতো বড় না হলেও, দেখতে বালিশের মতো এবং ক্ষীরের প্রলেপের কারণে এটি একটি আবরণীসমেত বালিশের মতোই দেখায়। এই মিষ্টি 'গয়ানাথের বালিশ' নামেও সুপরিচিত।

বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, নতুন জামাইয়ের শ্বশুরবাড়ি আগমনসহ বিভিন্ন উৎসবে নেত্রকোণার মানুষ বালিশ মিষ্টি বেশ আগ্রহের সাথে কিনে নিয়ে যান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেত্রকোণায় আসা ভ্রমণপিপাসু মানুষ জেলা শহরের বারহাট্টা রোডের গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারে বালিশ মিষ্টির স্বাদ নিতে আসেন।

জেলার ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পরিচিতি লাভ করেছে। দেশের বাইরে যাওয়ার সময় অনেকে ভালোবেসে নিজ জেলার স্মারক হিসেবে এই মিষ্টান্ন নিয়ে যান।

বালিশ মিষ্টি তৈরি হয় দেশীয় গরুর খাঁটি দুধের ছানা, চিনি ও ময়দা দিয়ে। প্রথমে দুধের ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। এরপর বিভিন্ন আকারের বালিশ তৈরি করা হয়। পরে সেগুলো চিনির গরম রসে ভাজা হয়। ঠান্ডা করার পরেও অনেকক্ষণ চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয়, ফলে মিষ্টি রসে টইটম্বুর হয়ে যায়। বিক্রির সময় বালিশের ওপর ক্ষীরের প্রলেপ বা দুধের মালাই দেওয়া হয়। বালিশ তৈরির প্রক্রিয়ায় কিছুটা গোপনীয়তা আছে, যা কারিগররা ব্যবসার স্বার্থে প্রকাশ করতে চান না।

পূর্বে দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও, বাজারে বালিশ মিষ্টির কাঁচামালের দাম বাড়ায় মিষ্টির দামও বেড়েছে। ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন আকৃতি ও দামে এই মিষ্টি বিক্রি করা হয়। এটি ৩০, ৫০, ১০০, ৩০০, ৫০০, ১০০০ টাকা দামে বিভিন্ন আকৃতিতে পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়। বড় আকৃতির বালিশ মিষ্টি একা খাওয়া সম্ভব হয় না; এক হাজার টাকার বালিশ মিষ্টি পাঁচ-ছয়জনে অনায়াসে খাওয়া যায়।

গয়ানাথের অন্যতম স্বত্বাধিকারী বাবুল মোদকসহ কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বালিশ মিষ্টির জনক গয়ানাথ ঘোষ। হিন্দুদের মধ্যে ঘোষ পরিবার মিষ্টি তৈরিতে বিখ্যাত। নেত্রকোণা শহরের বারহাট্টা রোডের 'গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার'-এর স্বত্বাধিকারী গয়ানাথ ঘোষ শত বছরেরও বেশি সময় আগে বালিশ মিষ্টি উদ্ভাবন করেন। গয়ানাথের স্বপ্ন ছিল নতুন ধরনের মিষ্টি আবিষ্কার করা। একদিন তিনি বিশাল সাইজের একটি মিষ্টি তৈরি করলেন এবং ক্রেতাদের খেতে দিলেন। ক্রেতারা খুব প্রশংসা করায় তাদের পরামর্শে মিষ্টিটির নাম রাখা হয় বালিশ। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় অল্প দিনেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে বালিশের নাম। এর উদ্ভাবক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান গয়ানাথ ঘোষ। তাই এক সময় তার নামটিও বালিশের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। লোকমুখে বালিশের নাম হয়ে ওঠে 'গয়ানাথের বালিশ'।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় ঘোষ পরিবারের অনেকেই ভারতে চলে যান, কিন্তু গয়ানাথ ঘোষ যাননি। তবে পরিবারের টানে গয়ানাথ ঘোষ ১৯৬৯ সালে ভারতে চলে যান। এ সময় তিনি প্রতিষ্ঠানটি বালিশ তৈরির প্রধান কারিগর নিখিল মোদকের কাছে বিক্রি করেন। নিখিলের মৃত্যুর পর এটি এখন তার তিন ছেলে বাবুল, দিলীপ ও খোকন মোদক পরিচালনা করছেন।

বড় ছেলে বাবুল মোদক জানিয়েছেন, গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রতিষ্ঠাতা গয়ানাথ ঘোষ প্রায় একশো বছর আগে এই দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন। গয়ানাথ ১৯৬৫ সালে তার বাবা নিখিল চন্দ্র মোদকের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেন। তার বাবা গয়ানাথের প্রতিষ্ঠানে মিষ্টি তৈরির প্রধান কারিগর ছিলেন। ১৯৬৫ সালে বাবা এই প্রতিষ্ঠান কেনার পর থেকে তারা এটি পরিচালনা করে আসছেন। তিনি আরও জানান, "নেত্রকোণা ব্যতিত আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোথাও কোনো শাখা নেই। আমরা অনলাইনে পার্সেল হিসেবেও এই মিষ্টি বিক্রি করি না। যদি কেউ বালিশ মিষ্টির স্বাদ নিতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে নেত্রকোণায় এসে গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকেই নিতে হবে। এটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা নেত্রকোণাবাসী গর্বিত।"

জিআই পণ্যের স্বীকৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, "নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টি সারাদেশে পরিচিত। নেত্রকোণার নাম মুখে নিলেই বালিশ মিষ্টির কথা সবার স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। আমরা নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টিকে জিআই পণ্যে ঘোষণার জন্য সকল পদ্ধতি মেনে চিঠি লিখেছি এবং যতটুকু শুনতে পেরেছি এটির অনুমোদন হয়ে গেছে। অফিশিয়াল চিঠি পেলেই আমরা এই জিআই পণ্যের সার্টিফিকেট গ্রহণ করার জন্য যাবো এবং এটিকে উদযাপন করবো।" তিনি আরও যোগ করেন, "এর পূর্বে আমরা জেলার বিজয়পুরের সাদামাটির জিআই পণ্যের সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছি। এখন যদি আমরা বালিশ মিষ্টির জিআই সার্টিফিকেটটি পাই, তাহলে অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের আরও একটি ধাপ এগোলো। জেলায় এমন আরও কোনো পণ্য থেকে থাকলে সেগুলো অনুসন্ধান করে যেন জিআই পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় সে প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখবো।"

এই অঞ্চলে বালিশ মিষ্টির ঐতিহ্য নিয়ে প্রচলিত বহু ছড়া যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে চলে আসছে। বালিশ নিয়ে এমন একটি লোকজ ছড়া হলো— "জাম, গোল্লা পেয়ে শ্বশুর করলো চটে নালিশ, কথা ছিল আনবে জামাই নেত্রকোণার বালিশ।"

গয়ানাথের বালিশ মিষ্টি এতটাই জনপ্রিয় যে, প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসেও এ সম্পর্কে লেখা হয়েছে। স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকরা বালিশ মিষ্টিকে নিয়ে ছড়া-কবিতাও লিখে থাকেন। বারহাট্টা রোডের প্রধান শাখায় বালিশ মিষ্টি তৈরির নিজস্ব কারখানা রয়েছে। জেলা শহরের স্টেশন রোড ও মেছুয়া বাজারে দুটি শাখা থাকলেও, জেলা শহরের বাইরে তাদের কোথাও কোনো শাখা নেই।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]