
বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতি, অনিয়ম ও গ্রাহক হয়রানি গোটা দেশের মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহক হয়রানি ব্রিটিশ আমলের নীলকরদের অত্যাচারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রিপেইড মিটার সংযোগের নামে গ্রাহকদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। ডিজিটাল মিটারের ডিমান্ড চার্জ এবং ডিজিটাল কারসাজি নিয়ে সকালে রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক মতবিনিময় সভা করেছে বিদ্যুৎ গ্রাহক ও সেচ পাম্প মালিক সমিতি।
আনাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় অনেক ভুক্তভোগী গ্রাহক এবং বিদ্যুৎ গ্রাহক ও সেচ পাম্প মালিক সমিতির সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। সবার পক্ষ থেকে আনাউর রহমান বলেন, বর্তমানে আমরা ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করে ১ কিলোওয়াট হিসাবে ডিমান্ড চার্জ দিচ্ছি। অন্যদিকে প্রিপেইড মিটার সংযোগ হলে প্রতিটি গ্রাহককে ৩ কিলোওয়াট হিসাবে ডিমান্ড চার্জ দিতে হবে। যেখানে আমরা বর্তমানে ১ কিলোওয়াট ডিমান্ড চার্জ ৪২ টাকা দেই, সেখানে প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে দিতে হবে ৪২×৩ = ১২৬ টাকা। এর সঙ্গে মিটার ভাড়া ৪০ টাকা, সব মিলে ১৬৬ টাকা আমাদেরকে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে। এই টাকা সম্পূর্ণরূূূপে লুট হচ্ছে। ৪ কোটি ৮৭ লক্ষ গ্রাহক প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা দেয়, যার কোনো হিসাব আজ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগে নেই। আমরা ট্যাক্স, ভ্যাট, সার্ভিস চার্জ দেই, যা আমরা দেব, কারণ ওই টাকা রাষ্ট্র পাবে। কিন্তু ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া আমরা দেব না।
অন্যদিকে, বিদ্যুৎ বিল প্রদানের ক্ষেত্রে ০-২০০ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিটের মূল্য এক হতে হবে। সেক্ষেত্রে স্লাব পদ্ধতির বিল বাতিল করতে হবে। দেশে কুইকরেন্টাল ও বিদেশীদের কাছ থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ ক্রয় করে সরকার টাকা অপচয় করছে। এই দায় সম্পূর্ণ গ্রাহকের ওপর পড়ছে। ওইসব চুক্তি বাতিল করে দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সৌর পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে। তাতে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পাবে।
আনাউর রহমান আরও বলেন, গাইবান্ধা জেলায় ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকা বেশি বিদ্যুৎ বিল করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে উঠলে সে সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগে একটি তদন্ত হয়, যাতে ২০১৪-২০১৬ সালের মধ্যে ৫ কোটি ২৭ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল ধরা পড়ে। পরবর্তীতে ওই বিল সমন্বয় করার কথা থাকলেও তার সবটুকু অতিরিক্ত বিল আজও সমন্বয় হয়নি। এ ব্যাপারে দায়ী কর্মচারীদের বিচারের কথা থাকলেও আজও তাদের বিচার হয়নি। সব অতিরিক্ত বিল সমন্বয় না করে প্রায় ১০০টির মতো মামলা দিয়ে গ্রাহক হয়রানি করা হচ্ছে, যা আমরা আজও বন্ধ করতে পারিনি। এ রকম সমস্যা সারা দেশে হচ্ছে। তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্তৃক বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অর্থ চুরি করার জন্য সমস্ত অন্যায় সিদ্ধান্ত প্রতিহত করার এবং দেশব্যাপী দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
আলোচনা শেষে বক্তারা যে সমস্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন সেগুলো হলো:
১. প্রিপেইড মিটার সংযোগ বন্ধ করতে হবে।
২. ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া বাতিল করতে হবে।
৩. স্লাব পদ্ধতির বিল বাতিল করে ০-২০০ ইউনিট পর্যন্ত ফ্ল্যাট পদ্ধতিতে বিল নিতে হবে।
৪. রেন্টাল-কুইকরেন্টাল সহ বিদেশ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ ক্রয় বন্ধ করতে হবে।
৫. চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে অধিক মনোযোগী হতে হবে। গ্রাহকদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এ পর্যন্ত দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর