
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য। আর ১২ টি দলের নিবন্ধন আবেদনের তথ্য অধিকতর পর্যালোচনা করা হবে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, মোট রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য যখন আবেদন চাওয়া হয়েছিল তখন ১৪৩টি দল আবেদন করেছিল। এরপর ২২টি দলের মাঠপর্যায়ে তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে দুটি দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করেছে—একটি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আরেকটি বাংলাদেশ জাতীয় লীগ। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আদালতের রায়ে তারা নিবন্ধন যোগ্য। রায় প্রাপ্তির পরে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগের বিষয়ে আমরা এখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেব, যাতে তাদের বিষয়ে কোনো উজরা বা আপত্তি থাকলে জানানো যায়। তবে এনসিপির প্রতীক নিয়ে একটি বিষয় অনিষ্পন্ন আছে। তারা যে প্রতীক চেয়েছেন, সেটি আমাদের প্রতীকসংক্রান্ত বিধিমালার তফসিলে নেই। এ কারণে তাদের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হবে প্রতীক নিশ্চিত করার জন্য। তারা আমাদের নতুন প্রতীক জানালে সেটি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় লীগের ব্যাপারে কোনো জটিলতা নেই।
তিনি আরও বলেন, নিবন্ধনের বিষয়ে আরও কয়েকটি দলকে অধিকতর পর্যালোচনা করতে হবে। এর মধ্যে সচিবালয় পর্যায়ে এবং আংশিকভাবে মাঠপর্যায়ে যাচাই হবে। সচিবালয়ে যেসব দলের অধিকতর যাচাই হবে, সেগুলো হলো—বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ)।
পুনরায় মাঠপর্যায়ের তদন্তে যে ৯টি দলকে পাঠানো হবে, সেগুলো হলো—আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা এবং জনতা পার্টি বাংলাদেশ।
যে ৭টি দলের নিবন্ধন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে, সেগুলো হলো—ফরোয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-সিপিবি এম), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলিউশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।
কিছু দলকে পর্যবেক্ষণে রাখা, আবার কিছু দলকে অধিকতর পর্যালোচনায় পাঠানো এবং এনসিপিকে চিঠি দেওয়ার বিষয়গুলো একসঙ্গে করা হলো না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু তথ্যের সন্নিবেশ করতে অসুবিধা হয়েছে। একটি দলের ক্ষেত্রে তথ্য সঠিক হলেও আরেকটি দলের জন্য সেটি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, না বলে দেওয়া বা বাদ দেওয়ার চেয়ে আরেকটু যাচাই করাই উত্তম।
তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞপ্তি একসঙ্গে নাও হতে পারে। হতে পারে ধাপে ধাপে দেওয়া হবে। চার দিনের ছুটির মধ্যে কাজ চলবে। যদি এর মধ্যে এক বা দুই দলের বিষয় চূড়ান্ত হয়, তবে তাদের বিজ্ঞপ্তি আগে দেওয়া হবে।
প্রথমে যে তিনটি দলের কথা বলা হলো এবং পরে যে নয়টি দলের কথা বলা হলো—এই পার্থক্য কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পার্থক্য আছে। যেমন আমাদের হাতে থাকা কিছু তথ্য এবং অতিরিক্ত কিছু অনানুষ্ঠানিক তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, সচিবালয় পর্যায়ে ফাইল যাচাই করলেই কিছু অসংগতির বিষয় স্পষ্ট হবে, যা হয়তো মাঠপর্যায়ে পাঠাতে হবে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে পাঠাতে হবে। এভাবেই শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমি সবসময় বলেছি আপনাদের নিয়মিতভাবে জানাবো। তাই আপনাদের জানার চেষ্টা এবং সবাইকে জানানোর প্রচেষ্টা চলমান থাকুক, যাতে মিসইনফরমেশন বা ডিসইনফরমেশন না হয়। তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকা উচিত।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এনসিপিকে একটি চিঠি দেওয়া হবে তাদের প্রতীক নিশ্চিত করার জন্য, কারণ তারা যে প্রতীক চেয়েছেন সেটি বিধিমালার তফসিলে নেই।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয় জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরে থাকে ইসি। এ প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়ম কানুন মেনে আবেদন করতে হয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর