
নাগরপুরে প্রায় ৫৫ বছর ধরে একই উঠানে চলে আসছে মসজিদ ও মন্দিরের নিয়মিত কার্যক্রম। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে যাচ্ছে। মসজিদের পাশে মন্দিরে ধুমধামে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান চলছে। অপরদিকে, মসজিদে আজান ও নামাজের সময় বন্ধ থাকছে পূজার সকল কার্যক্রম।
উপজেলা সদরের চৌধুরীবাড়িতে ৯১ বছর আগে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর এখানকার মুসলমানরা নাগরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ গড়ে তোলেন। সেখান থেকেই পাশাপাশি চলে আসছে দুই ধর্মের ধর্মীয় উৎসব।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদরে একটি দেয়ালঘেরা পূজামণ্ডপ ও তার পাশে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। পূজা চলাকালীন সময়ে দুপুরে মসজিদে আজান শুরুর আগেই থেমে গেল পূজার যাবতীয় কার্যক্রম। এমন সময় জানিয়ে দেওয়া হয়, আজান এবং নামাজের পর আবার মন্দিরে মাইক ও ঢোলসহ পূজার যাবতীয় কার্যক্রম চলবে। এরপরই পাশাপাশি মসজিদ থেকে ভেসে এলো আজানের সুর, পরপরই নামাজিরা আসতে শুরু করলেন মসজিদে। শুরু হলো নামাজ। নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার বেজে উঠল মন্দিরের ঢাক ঢোলসহ উলুধ্বনি। শুরু হয় পূজার কার্যক্রম।
নামাজি ও পূজারীরা জানান, এখানকার মানুষ শান্তিকামী, কোনো দিন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা হয়নি। দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে অনেক মিল আছে। সবাই মসজিদ ও মন্দিরে নিজ নিজ ধর্মের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে কখনো কারো কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি। তাঁদের প্রত্যাশা, যুগ যুগ ধরে এই বন্ধন অটুট থাকবে।
এলাকাবাসী অনন্যা সাহা বলেন, "আমাদের মন্দিরের পাশে মসজিদ। আমরা যেমন মুসলমানদের ঈদে আনন্দ করি, তেমনি আমাদের পূজায় মুসলমানরাও আনন্দ করে। আমরা সবাই একসঙ্গে পূজা উদযাপন করি।"
পূজা মন্দিরের সভাপতি লিটন কুমার সাহা বলেন, "আমাদের এখানে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা নেই। আমরা একে অপরের সঙ্গে প্রায় ৫৫ বছর ধরে পূজা উদযাপন করে আসছি। পূজা উদযাপনে কাউকে কিছু বলতে হয় না। তাঁরা নিজ নিজ দায়িত্বে তাঁদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে যাচ্ছে।"
মসজিদের ইমাম মো. আব্দুল লতিফ বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে আমি এই মসজিদের ইমামতি করে আসছি। ইমামতির বয়স প্রায় ৩৮ বছর। এই উপজেলায় চৌধুরীবাড়ী মসজিদ ও মন্দির একই উঠানে একটি দেয়ালে বন্দি। এখানকার মুসলমানরা পূজার সময়ে মন্দিরের প্রতি খেয়াল রাখেন, যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত মোহাম্মদ নোমান বলেন, "এখানে প্রায় ৫৫ বছর ধরে পূজা অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী, উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সু-সম্পর্ক রয়েছে। এখানে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় না। এছাড়াও আমরা প্রশাসন পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকি।"
জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান দুর্গাপূজায় পরিদর্শনকালে বলেন, "এই নাগরপুরে দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে মসজিদ ও মন্দিরে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম সম্প্রীতি বজায় রেখে পালন করে আসছে। এই এলাকার মানুষের মধ্যে সামাজিক যে বন্ধন, সেটি বিদ্যমান আছে।
নাগরপুরের এই দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দৃষ্টান্ত যদি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে বিশ্ব থেকে দূর হবে সাম্প্রদায়িক হানাহানি।"
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর