
গাজীপুর সদর উপজেলার মনিপুরের বিশিয়া কুড়িবাড়ী গিভেন্সি গ্রুপের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ১৩১ জন প্রবীণের ঠাঁই হয়েছে।
তাঁদের মধ্যে ১২ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী রয়েছেন, যাঁদের ৯ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ। জীবনে সব হারানোর বেদনা নিয়ে তাঁরা বৃদ্ধাশ্রমকেই নতুন সংসার মেনে নিয়েছেন। তাই এখানকার মতো করেই পুজো উপভোগ করতে তাঁরা অভ্যস্ত। তবুও বাড়ি ফেরার 'স্বপ্ন' তাঁদের মনে বাসা বাঁধে, যা বাস্তবে স্বপ্নই থেকে যায়।
সরেজমিনে তাঁদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সোনালি অতীতের নানা স্মৃতি প্রকাশ করেন, হেসেছেন, কেঁদেছেন। চোখ থেকে পড়া অশ্রু আঁচল দিয়ে মুছে নেন তাঁরা। সেই সুখস্মৃতিতে ডুব দিয়ে পুজোর কয়েকটা দিন কাটিয়ে দিতে চান এই প্রবীণরা। বাবার বাড়িতে ধুমধাম করে দুর্গাপূজা হওয়ার স্মৃতি, বাড়িঘর ঝাড়পোঁছ, অতিথিদের আসা-যাওয়া, পূজার সাজগোজ, বান্ধবীদের সঙ্গে প্যান্ডেলে ঘোরা, মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরাঘুরি, প্রসাদ খাওয়া – এই স্মৃতিগুলো বর্ণনা করেন তাঁরা।
তাঁরা জানান, বৃদ্ধাশ্রমে থেকেই শারদ উৎসব উপভোগ করবেন। প্রতি বছরই কর্তৃপক্ষ তাঁদের পূজা দেখতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে শারীরিক সক্ষম ব্যক্তিরা যান পুজো দেখতে। তবে পরিবারের সঙ্গে পূজা করতে না পারার আক্ষেপটা রয়ে যায় তাঁদের।
অনিমা চৌধুরী নামে এক প্রবীণ বলেন, "বাড়িতে দুর্গাপূজা হতো, কত আনন্দ! মুসলমানরাও আসত। সবাই দেখত, খানা খেত। কত আনন্দ ছিল সেই দিনগুলো, আর ফিরে আসবে না। ছোটবেলার আনন্দ মনে করে অনুতাপ করে লাভ নেই। প্রতিমা দেখতে গেছি, প্রসাদ খেয়েছি। কত সাজগোজ, মনে হলেই খারাপ লাগে। আগে কী দিনগুলো ছিল, অথচ এখন এখানে এতিমের মতো পড়ে রয়েছি। মন খারাপ হয়, কিন্তু কাউকে বলতে পারি না।"
হরিসাধন দে পূজার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, "পূজায় চাঁদা দেওয়া, তোলা, হৈ-হুল্লোড় – এসব খুব মনে পড়ে। সেই আনন্দ কি এখন পাওয়া সম্ভব? এখন সেগুলো শুধুই স্মৃতি।"
সচেতন মহল বলছে, একজন মা হয়তো সারাজীবন সন্তানদের লালন-পালন করে বড় করেছেন, কিন্তু বয়সের ভারে যখন তিনি অসহায় হয়ে পড়লেন, তখন তাঁর জায়গা হলো বৃদ্ধাশ্রমে। বাবাদের গল্পও আলাদা নয়, যাঁরা একসময় পরিবারের স্তম্ভ ছিলেন, আজ তাঁরা যেন সেই পরিবারের বোঝা হয়ে গেছেন। যখন তাঁদের নিরুপদ্রব এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের আশা, তখন তাঁদের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে। কোনো মা-বাবার স্থান বৃদ্ধাশ্রমে না হোক, অন্তত উৎসবের দিনগুলোতে পরিবারের সঙ্গে কাটুক তাঁদের।
গিভেন্সি গ্রুপের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের সহকারী হোস্টেল সুপার মীম আক্তার সুমা বলেন, "প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রমে অসংখ্য গল্প লুকিয়ে থাকে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় এখানে এসেছেন, কিন্তু বেশিরভাগই পরিস্থিতির শিকার হয়ে এসেছেন।
অনেকেই সন্তানদের অবহেলার শিকার। আমাদের এখানে পূজায় নতুন পোশাক দেওয়া হয়। দশমীর দিনে গাড়িতে বিভিন্ন মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হয় পূজা দেখাতে। ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।"
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর