
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারো জেলে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় চরম হতাশায় পড়েছেন।
আগামী ৩ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত জারি করা এই নিষেধাজ্ঞা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমের সুরক্ষায় জরুরি হলেও জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তা। সরকারি সহায়তার ঘাটতি, বিকল্প জীবিকার অনুপস্থিতি এবং পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে জেলেদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, ইলিশের প্রজনন সুরক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত জরুরি। প্রতি বছর আশ্বিন মাসে ইলিশ ডিম পাড়ে। এ সময় ইলিশকে নির্বিঘ্নে ডিম দেওয়ার সুযোগ করে দিতে সরকার ২২ দিনের জন্য সমুদ্র ও নদীতে ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে। তবে এই উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩১১ জন।
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উপকূলের দিনমজুর শ্রেণির জেলেরা, যাদের মাছ ধরাই একমাত্র আয়ের উৎস। জেলেরা বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নিতে প্রস্তুত, তবে বিকল্প আয় বা পর্যাপ্ত সহায়তা না থাকলে তারা ও তাদের পরিবার অনাহারে থাকবে।
দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সামরাজ মৎস্যঘাটের জেলে আবুল বাশার বলেন, "প্রতি বছরেই সরকার ইলিশের ভরা মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে আমাদের জন্য সরকার যে বরাদ্দ দেয়, এতে আমাদের সংসার চলে না। বহু প্রকৃত জেলে বরাদ্দ চালও পান না। এসব বরাদ্দের চাল যায় প্রভাবশালীদের বাসায়। অনেক সময় পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয় আমাদের।"
একইভাবে গাছির খাল মৎস্যঘাটের জেলে সামসুদ্দিন মাঝি বলেন, "বিগত কয়েক বছর ধরে বুক ভরা আশা নিয়ে সাগরে ও নদীতে গিয়েছি মাছ শিকারে। তবে বেশিরভাগই লোকসান গুনতে হয়েছে। এই বছরে ইলিশের তেমন দেখা মেলেনি। তবুও কিছু মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তা বিক্রি করে কোনোরকম সংসার চালানো গিয়েছে। এই সময়ে সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মাছ ধরতে না পারলে সংসার চালাবো কীভাবে?"
জেলেদের অভিযোগ, সরকার প্রতি বছর নিবন্ধিত জেলেদের জন্য পরিবারপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক জেলে সে চাল পান না, বা বিলম্বে পান। তা ছাড়া যারা এখনও নিবন্ধিত নন, তারা সম্পূর্ণরূপে এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত। সহায়তার বণ্টনে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, মা-ইলিশ রক্ষায় এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতেই সরকার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই ২২ দিনে নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলে আমরা আগামীতে অনেক বেশি ইলিশ পেতে পারি। তবে যেসব জেলেরা এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে বেকার হয়ে পড়েন, তাদের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা সঠিকভাবে বণ্টন করার চেষ্টা করি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর