
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নেওয়ার বিধান কোনো বাধা নয়, এটি কেবল আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, "আমাদের নিয়ত পরিষ্কার। এটা শুধু আরপিও'র লিগ্যাল রিকোয়্যারমেন্ট। আইনটাকে অনার করার জন্য করা হয়েছে। ভুল বুঝবেন না—আমরা মিডিয়াকে অ্যাক্সেস দিতে চাই।"
সোমবার নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের এসব কথা বলেন তিনি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী এই সংলাপে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা অংশ নেন।
সিইসি সকলের আলোচনা শেষে বলেন, অনেক মূল্যবান পরামর্শ এসেছে। আমরা যতটুকু পারি আপনাদের পরামর্শ বিবেচনা করব। আপনাদেরকে আমরা সত্যিকারের পার্টনার হিসেবে পেতে চাই। জনগণের কাছে আমাদের বার্তা একমাত্র মিডিয়াই পৌঁছাবে। আপনারা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা মিডিয়াকে অ্যাক্সেস দিতে চাই। আমাদের নিয়তের মধ্যে কোনো গলদ নেই। নিয়ত একদম পরিষ্কার। মিডিয়ার জন্য আমাদের দরজা সবসময় খোলা।
তিনি বলেন, "বিশ্বাস করেন আমাদের মিডিয়ার এন্ট্রি রেস্ট্রিকশন করার কোনো উদ্দেশ্য কাজ করে নাই। একটা লিগ্যাল রিকোয়্যারমেন্ট আছে। আমাকে একটা দেশের অ্যাম্বাসেডর চিঠি লিখেছিলেন যে, অবজারভারের (পর্যবেক্ষক) জন্য কেন আবার প্রিজাইডিং অফিসারের পারমিশন লাগবে। একই কথা আপনারা বলছেন। ইট ইজ আ লিগ্যাল রিকোয়্যারমেন্ট অফ আরপিও। কারণ ওইদিনের জন্য প্রিজাইডিং অফিসার সর্বেসর্বা। আমার নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কিন্তু উনার কাছে অর্পিত। প্রিজাইডিং অফিসারই ডিসিশন মেকার। দেখেন ভোটের রুমটা অনেক ছোট। এখানে প্রিজাইডিং অফিসার, ল' এনফোর্সমেন্টের লোক থাকে, পোলিং অফিসার, এজেন্ট থাকে, অবজারভার থাকে, সাংবাদিকরা থাকে। এখন সবাই যখন একটা রুমে লাইভ করার জন্য ঢুকে পড়ে তাহলে স্পেসের একটা সমস্যা হতে পারে। এই ম্যানেজমেন্টটাই প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে ন্যাস্ত আছে। তাই এটা কোনো পারমিশন না, এটাকে ইনফর্ম করার মতো মনে করেন।"
ডিবিসি টেলিভিশনের সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, "সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ ভাবলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অনিয়ম হলে তা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর কমিশনকে গুরুত্ব দিতে হবে, নইলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।" তিনি বলেন, প্রশাসনের দায়সারা মনোভাব বন্ধ করে তফসিল ঘোষণার আগেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এটিএন নিউজের শহিদুল আজম বলেন, "অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, বিলম্বিত তথ্য কাম্য নয়। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।" তিনি যোগ করেন, নিবন্ধিত গণমাধ্যম কঠোর নিয়ম মেনে চলে, কিন্তু ইউটিউব বা ফেসবুকে ছড়ানো খবর আটকানো কঠিন—এ কারণে দ্রুত তথ্য সরবরাহ জরুরি।
স্টার নিউজের ওয়ালিউর রহমান মিরাজ বলেন, "২০০৮ সালের পর থেকে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমান ইসি এখনো আনটেস্টেড—তাদের ওপর জনআস্থা কতটা আছে, সেটিই বড় প্রশ্ন।" তিনি বলেন, প্রশাসন ও পুলিশের ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত না হলে আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির মোস্তফা আকমল বলেন, "সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করবে। ইসিকে এখন থেকেই এআই ও গুজব মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে হবে।"
গ্লোবাল টিভির ফেরদৌস মামুন বলেন, "আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এখনো আস্থা নেই। দ্রুত ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ না হলে গুজব বাড়বে।"
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ অন্য কর্মকর্তারা, স্টার নিউজের হেড অফ নিউজ ওয়ালিউর রহমান মিরাজ, মাছরাঙ্গা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি নিয়াজ মোর্শেদ, আনন্দ টিভির নিউজ ইনচার্জ জয়নাল আবেদীন, এটিএন বাংলার চিফ রিপোর্টার একরামুল হক সায়েম সংলাপে অংশ নিয়েছেন।
সর্বশেষ খবর