
জয়পুরহাটে হঠাৎ করে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত চারদিনে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মোট ৩৯৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদের মধ্যে বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। ভর্তি হওয়া রোগীদের অধিকাংশ জয়পুরহাট পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করছেন যে, পৌরসভার সরবরাহ করা পানির কারণেই তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পূজা উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মেলায় খোলা খাবার পরিবেশনকে এই ডায়রিয়া বৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার (৪ অক্টোবর) জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৩৮ জন রোগী ভর্তি হন। পরেরদিন রবিবার (৫ অক্টোবর) ভর্তি হন ১০১ জন এবং একইভাবে সোমবার (৬ অক্টোবর) ৮৩ জন ও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হন ৭৩ জন।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপে চিকিৎসক ও নার্সদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে বর্তমানে রোগীর চাপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে এবং অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে হাসপাতালের তিন তলায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো ওয়ার্ড জুড়েই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি আছেন। জায়গা না হওয়ায় ওয়ার্ডের বাইরের করিডোরের মেঝেতেও ভর্তি হওয়া রোগীদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
এ সময় জয়পুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধানমন্ডি মহল্লার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার (৬০) জানান, "গত শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বমি ও পাতলা পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না। এসে দেখি পুরো হাসপাতাল জুড়ে শুধু ডায়রিয়ার রোগী। তিন দিন ধরে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন, কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না।"
পাশের শয্যায় ভর্তি থাকা একই মহল্লার গোপাল প্রসাদ আগরওয়ালা জানান, গত রবিবার থেকে তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বমি বন্ধ হলেও পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অধিকাংশ রোগীই জয়পুরহাট পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
আক্রান্তদের অভিযোগ, পৌরসভা থেকে সরবরাহ করা পানি পান করে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। ধানমন্ডি মহল্লার মরিয়ম বেগম জানান, পৌরসভার সরবরাহ করা পানি পান না করেও তার তিনজন স্বজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পানির মধ্যে তরল ময়লা মিশ্রিত বলে জানান তিনি।
পাঁচবিবি উপজেলার গোপীনাথপুর থেকে আসা নুর ইসলাম জানান, তিন দিন আগে আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার পর তার বাবা আব্দুর রউফ (৭০) ও দুই ভাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত রবিবার গভীর রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বার বার স্যালাইন দিয়েও ভালো হচ্ছে না।
পূজা মেলার মিঠাই-মিষ্টান্ন খাওয়ার পর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত রবিবার সকাল ১০টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের পারভিন আক্তার (৩০)। তার মা বলেন, আক্রান্তের পর থেকে চিকিৎসা চললেও পায়খানা ও বমি বন্ধ হচ্ছে না। তার কিডনির সমস্যাও আছে, তাই মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
হাসপাতালের সহকারী চিকিৎসক মো. হারিছ বলেন, "গত চার দিন থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অধিকাংশ রোগী ভর্তি হয়েছে জয়পুরহাট পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লার। পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়া রোগ হতে পারে। পানি পরীক্ষা করলেই বিষয়টি জানা যাবে।"
জয়পুরহাট পৌরসভার সেনেটারি ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ বলেন, "পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে এমন অভিযোগের পর আক্রান্ত এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করে বগুড়ায় ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় পানির কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। তাছাড়া পানির কারণে ডায়রিয়া হলে গোটা পৌরসভার বাসিন্দারা আক্রান্ত হতেন। কাজেই অভিযোগটি সঠিক নয়।"
জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, "গত কয়েক দিন থেকেই হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেশি। তবে বর্তমানে কিছুটা কমেছে।"
পূজা উৎসবকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মেলায় উন্মুক্ত খাবারের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর