
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ‘ডিবি হেফাজতে থাকাকালীন আমাদের হত্যার নির্দেশ ছিল। শেখ হাসিনা সরাসরি এ নির্দেশ দিয়েছিলেন।’ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখারপুলে আনাসসহ ৬ হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাক্ষ্যে এসব তথ্য দেন তিনি।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ আজ বৃহস্পতিবার দশম দিনে উপদেষ্টার আংশিক জবানবন্দি শেষ হয়। তার অবশিষ্ট জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আগামী ১৬ অক্টোবর পরবর্তী দিন রাখা হয়। এ মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার পলাতক হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, একপর্যায়ে তাদের (সমন্বয়ক) তুলে নিয়ে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। সেখানে আটকে রাখার সময় ডিবি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য চাপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ ও রমনা জোনের ডিসি হুমায়ুন কবীর সমন্বয়কদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন। তাদের বারবার বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে তাদের সেখানে আনা হয়েছে। আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারে রাজি না হলে আমাদের হত্যা করা হবে-শেখ হাসিনার এমন নির্দেশ রয়েছে। তবে তারা (ডিবি) আরও জানিয়েছে, দয়া করে তাদের এখনো বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।’
জবানবন্দিতে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে কোটা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায় এবং পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন তিনি। বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আন্দোলনের সময় সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি গত বছর ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় ৬ জনকে হত্যায় জড়িত শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মূলমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ যারা গুলি করার কমান্ডিং অথরিটিতে ছিলেন তাদের বিচার দাবি করেন।
আসিফ বলেন, গত বছর ১৯ জুলাই দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়। এদিন রাতেই তাকে তুলে নেন সাদা পোশাকধারীরা। মাথায় কালো টুপি পরিয়ে মাইক্রোবাসে তাকে নিয়ে যান ডিবি পরিচয়ে আসা কিছু লোক। রাখা হয় কথিত সেনানিবাসের আয়নাঘরে। আর সেখানেই জুলাই আন্দোলন প্রত্যাহারে ভিডিও বার্তা দিতে চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু রাজি না হলে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে ফেলা হয়।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। আমরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রাখি। সেদিন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুড়িয়ে দিয়ে দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয়। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বহু মিথ্যা মামলা করা হয়। একইসঙ্গে ব্লক রেইড দিয়ে ব্যাপক মাত্রায় ধরপাকড় শুরু করা হয়। সেদিন রাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ১৯ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কিছু লোকজন আমাকে মাথায় কালো টুপি পরিয়ে তুলে নিয়ে যান। ওই রাতে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে আন্দোলন প্রত্যাহারে একটি ভিডিও বার্তা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। ৩২ ঘণ্টা অনশনে থাকার পর সমন্বয়কদের ডিবি অফিস থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হন। পরে জানতে পারি, সেখানে ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ চাইনিজ রাইফেল ও শটগান ব্যবহার করে।
এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর