
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আর্থিক অনিয়মে অভিযুক্ত এক কর্মকর্তাকে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নিয়ে বরং পদোন্নতি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে আবার আগের পদে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাড়ে তিন কোটি টাকার আত্মসাতের ঘটনায় চসিকের অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির চৌধুরীর দায়িত্বে অবহেলা পেয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেই সুপারিশ উপেক্ষা করে তাকে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি দেয় চসিক। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর মাত্র ছয় দিনের মাথায় সেই পদোন্নতির আদেশ বাতিল করে আবার আগের পদে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাকে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা থেকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা করা হয়। চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আমিনের স্বাক্ষর করা অফিস আদেশে এ তথ্য উল্লেখ ছিল। তবে দুদকের অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ উঠে আসার পর চসিকের ভেতরে বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। পরে ৫ অক্টোবর একই কর্মকর্তার স্বাক্ষরে সেই পদোন্নতির আদেশ বাতিল করা হয়।
দুদক সূত্রে জানা যায়, চসিকের অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনা ঘটে অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখায়। ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর ওই শাখার ক্লিয়ারিং সেকশনের কর্মকর্তা মো. রফিক উদ্দিন কোরাইশীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তদন্তে দেখা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়রের নামে চেক ইস্যু হলেও সেই টাকা চসিকের হিসাবে জমা না হয়ে জমা হতো অন্য হিসাবে। এভাবে আত্মসাৎ করা হয় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।
তদন্তে অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার তিন কর্মকর্তা— রফিক উদ্দিন কোরাইশী, প্রিন্সিপাল অফিসার শুভম দেওয়ান ও গাজী আরিফুর রহমান— এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা সুমন মিয়ার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। দুদক আদালতে এই চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় এবং চসিকের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। তাদের একজন হুমায়ুন কবির চৌধুরী।
দুদকের বিশেষ পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন বলেন, যার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাকে পদোন্নতি দেওয়া অনুচিত। এতে অনিয়ম ও দুর্নীতি উৎসাহিত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চসিকের অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, প্রথমে নিয়মমাফিক পদোন্নতির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে দুদকের মামলার বিষয়টি সামনে আসায় পুনরায় সভা করে পদোন্নতির আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর