
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নিজস্ব বাস ‘কুহেলিকা’-এর এক চালককে মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বাসটি ঝিনাইদহের আরাফপুর এলাকায় পৌঁছালে চালক মাহফুজুর রহমান পলটনকে মারধর করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ কলেজ ছাত্রদলের কর্মী ফয়সাল সামী ও হুসাইনসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জন জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, এদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া বাস রাজ মোটরস পরিবহনের ‘পদ্মা আরএম-গাজীপুর (নং ০৪০৪২০)’ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেখানে পৌঁছালে বাসটির চালক ও স্টাফরা জানান, “বাস ক্যাম্পাসে যাবে না। ক্যাম্পাসে ঝামেলা হয়েছে, আমরা যেতে পারব না।”
পরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি বাস পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বাসটি ঝিনাইদহের আরাফপুওে বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন সৃজনী তেল পাম্পের সামনে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জন দুর্বৃত্তরা চালক পলটনের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে পল্টনকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারতে থাকে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বাস ঝিনাইদহ শহরে প্রবেশ করলে সেটি ভাঙচুর ও আটকে দেওয়ার হুমকিও দেয়। পরে পল্টনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা অন্য একটি লাইনের বাসে করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে নাটকীয়তা দেখা গেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ‘অবৈধ’ দাবি করে এবং ছাত্রলীগ-সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ও ফ্যাসিস্ট শিক্ষকদের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে শাখা ছাত্রদল। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ‘ফ্যাসিস্টদের অংশগ্রহণের’ প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী। এতে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহগামী বাসগুলো ফটকের সামনে আটকে পড়ে। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা তালা ভেঙে ফটক খুলে দেন। তবে ফটক খোলার পর দুপুরে অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহগামী বাসের চালকদের হুমকি দেন এবং এসব রুটে গাড়ি চালাতে নিষেধ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভাড়া বাস না আসতে দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ বাস মালিক সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, “ছাত্রদলের কিছু কর্মী বাস চালাতে নিষেধ করেছে এবং হুমকি দিয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বাস ঝিনাইদহ রুটে চললে তা ভাঙচুর করা হবে। এজন্য বাস মালিকরা বাস ছাড়েননি।” এর আগে দুপুরে এবং মালিক সমিতিকে যারা বাস বন্ধের হুমকি দিয়েছিল, তারাই এই হামলার সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, কুহেলিকা’ বাসে হামলার ঘটনায় ঝিনাইদহ কলেজ ছাত্রদলের কর্মী ফয়সাল সামী ও হুসাইনসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জন জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, “সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ঝিনাইদহ বাস টার্মিনালে পৌঁছালে ড্রাইভার বললেন, বাস আর ক্যাম্পাসে যাবে না। আমরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ঝামেলা হয়েছে, আপনি জানেন না?’ আমরা বললাম, ‘ নিয়োগ নিয়ে ঝামেলো তো আগেই হয়েছিল, এখন আবার কী ঝামেলা?’ তখন ড্রাইভার জানালেন, ‘এখনও ঝামেলা চলছে, আমরা যেতে পারব না।’ এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, আমরা তাদের বিচার চাই।”
ভূক্তভোগী মাহফুজুর রহমান পল্টন বলেন, আমি বাস নিয়ে ঝিনাইদহ যাওয়ার সময় আরাফপুরের তেল পাম্বের সামনে আমার বাস আটকানো হয়। পরে একটা ছেলে বাসে উঠেই আমাকে লাথি মারে। পরে চারপাশ থেকে আমাকে এলেপাথারি মারধর করে। একপর্যায়ে আমি বাসেই অজ্ঞান হয়ে যাই।
অভিযুক্ত ফয়সাল সামী বলেন,"দল করার কারণে আমি বুলিংয়ের শিকার হয়েছি। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। উল্লিখিত ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমি ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ-সম্পাদক মানিক বিশ্বাস এবং যুগ্ম সাধারণ-সম্পাদক শাহরিয়ার রাসেল ভাইয়ের রাজনীতি করি।"
রাজ মোটরসের মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের হুমকি দিয়েছে যে, গাড়ি চালালে অসুবিধায় পড়তে হবে। স্টাফদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে, তাই তারা গাড়ি নিয়ে যেতে চাননি। এবং তারা বলেছে যে, ‘আমাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছুটা ঝামেলা চলছে; দুপুরে ক্যাম্পাসের গেটে তালা দেওয়া হয়েছিল।’ তবে যারা হুমকি দিয়েছেÑসরি তাদের নাম আমি বলতে পারব না।”
ঝিনাইদহ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাকিব আহমেদ বলেন, “স্থানীয় পত্রিকায় ফয়সাল সামীর নাম আসাটা আমাদের বোধগম্য নয়। কারণ ঘটনার সময় সামী আমার সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার ইসলামিয়া হাসপাতালে ছিল। তাহলে সে ঘটনাস্থলে কীভাবে থাকতে পারে? আর হুসাইনের বাড়িও আরাফপুর নয়।”
ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি এস এম সৌমেনুজ্জামান বলেন, পুরো ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত নই। এখন তো অনেকেই আমাদের দলের পরিচয় দিয়ে থাকে।
ইবির পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আবদুর রউফ বলেন, “ভাড়ার বাস পদ্মা আরএম-গাজীপুর (নং ০৪০৪২০) ক্যাম্পাসে আসতে দেওয়া হয়নি। গতকাল যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, এর সঙ্গে এর যোগসূত্র রয়েছে। সকালে গেট আটকানো হয়, পরে ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতিকেও গাড়ি না চালানোর জন্য হুমকি দেওয়া হয়। কারা এই হামলা চালিয়েছে, তা এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি।”
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ এসেছে। অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা রুজু করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর