
রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় বেঁঁচে যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা মানসিকভাবে অস্বাভাবিক একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর প্রভাব মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সচেতনতামূলক নাটিকা উপস্থাপন করা হয়।
এরপর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতের মানসিক স্বাস্থ্য ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় প্রত্যাক্ষদর্শীদের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্টার ডা. আরিফুজ্জামান জানান, ২৫৫ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, ৭১ শতাংশ ঘুমের সমস্যা, খিটখিটে মেজাজ ২৯ শতাংশের, ফ্লাশব্যাক ২৬ শতাংশ, ক্ষুধামন্দা ২৬ শতাংশ, মনোযোগের ঘাটতি ২০ শতাংশের, কাজের অনাগ্রহ ২০ শতাংশের।
ডা. আরিফুজ্জামান বলেন, এই ঘটনায় মানসিক রোগে ভোগা শিশুদের একটা বড় অংশ বাড়িতে অবস্থান করছে। যাদের চিকিৎসা দরকার।
কিন্তু তারা চিকিৎসার আওতায় আসছে না। অথচ তারা এখনো ঘুমাতে পারছে না। কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তুা কাজ করে। এটি চিহ্নিত করে চিকিৎসার আওতায় আনা জরুরি।
জুলাই আহত ১২৭ জনের ওপর করা গবেষণার তথ্য জানান ডা. নাজমুল হুদা বাপ্পি। তিনি বলেন, ৮২.৫ শতাংশ মাঝারি থেকে গুরুতর বিষন্নতায় ভুগছে। ট্রমা বা আঘাত-পরবর্তী পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) ভুগছে ৬৪.১ শতাংশ। গবেষণায় যুক্ত ৬৯.৬ শতাংশ নিম্ন-মধ্যবিত্ত। এদের মধ্যে ৮৯.৪ শতাংশ বন্দুকের গুলির আঘাতপ্রাপ্ত।
৮১.১ শতাংশ সময় মতো চিকিৎসা পেয়েছেন, ১০.১ শতাংশ বিলম্বিত হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা ঘুমাতে পারে না, আতঙ্কে ভুগছেন জানিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আমরা তৃতীয় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির ২৮ জন শিশুকে হারিয়েছি। তিনজন শিক্ষিকা, তিন অভিভাবক ও একজন আয়াকে হারিয়েছি। সেই সঙ্গে একজন পথচারীসহ দুজন।
তিনি বলেন, আমরা এমন শিক্ষার্থী পেয়েছি যারা ঘটনার দিন স্কুলে ছিল না। কিন্তু মানসিক সমস্যায় ভুগছে। তারা চোখ বন্ধ করলে দেখতে পায় বিমান তার ওপরে পড়ছে। এজন্য তারা ঘুমাতে পারছে না। খেতে পারছে না। তাদের আমরা চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করতে পেরেছি। আরেক শিক্ষার্থী সাইমন। সে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ছিল। সে বিমানের শব্দ নিতে পারছে না। স্কুলের নাম শুনতে পারছে না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র রায় পোদ্দার বলেন, আমাদের সমাজে যাদের জানাবোঝা নেই তাদের সঙ্গে শিক্ষিত মানুষরাও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বাইরে থাকছেন। এ তালিকা ডাক্তার পরিবারের সদস্যরাও রয়েছে। যাদের মানসিক চিকিৎসা দরকার।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর