
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের দড়িপাড়ায় শিয়ালের কামড়ে শিশুসহ আটজন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাতে একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে শিশুসহ সাতজন শিয়ালের কামড়ে আহত হন। এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
আহতরা হলেন জয়নাল হোসেনের ছেলে আরিফ, হাকিম মিয়ার ছেলে মোবারক, রাসেল মিয়ার ছেলে রিফাত, আবু মিয়ার ছেলে চাঁন মিয়া, শিপন মিয়ার ছেলে আশিক, তাহের মিয়ার ছেলে মাঈনউদ্দিন। খবর পেয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদেরকে জলাতঙ্ক রোগের টিকাসহ প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আটজন শিয়ালে কামড়ের রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মানিক জানিয়েছেন। রোগী আসা শনিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে।
ষাটোর্ধ্ব আবদুল মান্নান বলেন, শুধু মানুষ নয়, শিয়াল প্রতিদিনই ছাগল, গরু, হাঁস ও মুরগির ওপর ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে গ্রামীণ পশুপালন নির্ভর পরিবারগুলো চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিয়ালের এই উপদ্রব এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় এবং বৃষ্টি হলে বাড়ির আশপাশে থাকা পশুপাখি শিয়ালের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ইতোমধ্যে অনেকের গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি শিয়ালে নিয়ে গেছে। দলবেঁধে রাস্তায় এলোপাতাড়িভাবে শুয়ে থাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, এমনকি অনেক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনারও কারণ হচ্ছে।
ভবানীপুর গ্রামের সেলিনা বেগম নামের একজন গৃহিণী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কিছুদিন আগে তার সখের সাতটি চীনা হাঁস শিয়ালে নিয়ে গেছে। একই গ্রামের গৃহিণী লাভলী আক্তার বলেন, তার অনেক মুরগি ছিল, শিয়ালে নিতে নিতে এখন মাত্র অল্প কয়েকটি মুরগি আছে। যাত্রাপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, শিয়াল শুধু আমার নয়, অনেকেরই ক্ষতি করছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে হাঁস-মুরগি পালন বন্ধ করে দিতে হবে। মোচাগড়া গ্রামের রোস্তম আলীর স্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে তার মুরগি শিয়ালে নিয়ে গিয়েছিল, তিনি মুরগিটি আনতে গেলে শিয়াল তার হাত কামড়ে দিয়েছে, যার কারণে তিনি অনেক কষ্ট ভোগ করেছেন।
ইউনিয়নের খামারি হাফিজুর রহমান বলেন, মাসখানেক আগে তার খামারের জালি কেটে অনেক মুরগি নিয়ে গিয়ে অর্ধেক খেয়ে পুকুর পাড়ের এখানে সেখানে ফেলে রেখেছে। পুষ্করিনীরপাড় গ্রামের গ্রীন এগ্রো ডেইরি ফার্মের সুপারভাইজার সুমন মিয়া জানান, গত বুধবার তাদের খামারে শিয়াল আক্রমণ করে একটি বাছুর মেরে ফেলে এবং আরেকটি বাছুরকে আহত করে। তিনি আরও বলেন, এখন শিয়ালের উপদ্রবে রাতে ঘুমাতে পারেন না।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, এভাবে শিয়ালের উপদ্রব বাড়তে থাকলে একদিকে যেমন মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে, অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত—পশুপালন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা চরম ভোগান্তির শিকার হবে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্ম আলী বলেন, শিয়াল খামারি সহ গৃহিণীদের হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনে প্রচুর ক্ষতি করছে। শিয়ালের উপদ্রব বন্ধ করা অতিব জরুরি হয়ে পড়েছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর