• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ২ মিনিট পূর্বে
প্রচ্ছদ / জাতীয় / বিস্তারিত
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:৩২ বিকাল

হিট অফিসার বুশরার সঙ্গে অবৈধ সিসা বারের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন যারা

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে অবৈধ সিসা বার দেদারসে চলছে। ৫ আগস্টের পরও এই বাণিজ্যে ভাটা পড়েনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাতবদল হয়েছে মাত্র। সিসায় আসক্ত হয়ে বহু তরুণ-তরুণীর ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। 

রাজধানীতে সিসা বারের সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায়। সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে বুশরা আফরিন এই ব্যবসায় জড়িত। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সিসা বারের অবৈধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। 

সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ আমলে গুলশান ও বনানী এলাকায় খোদ মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, মেয়র এবং কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় বেশ কয়েকটি সিসা বার গজিয়ে ওঠে। এর মধ্যে গুলশানের কোর্ট ইয়ার্ড বাজার সিসা বার চালাতেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে হিট অফিসার বুশরা আফরিন। 

তিনি ডিএনসিসির ‘চিফ হিট অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। বুশরা বাংলাদেশসহ পুরো এশিয়ায় প্রথম চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) ছিলেন। 

গত ১৯ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে গুলশান থানা পুলিশ ‘দ্য কোর্ট ইয়ার্ড বাজার’ সিসা লাউঞ্জে এ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এ সময় বিপুল পরিমাণ সিসা, হুক্কা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাদকদ্রব্য ও নগদ অর্থ জব্দ করা হয় এবং ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়।

অভিযান প্রসঙ্গে গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, অভিযানে প্রায় চার কেজি সিসা, একাধিক হুক্কা-বার সেটআপ, বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, লাউঞ্জের মালিককে পাওয়া যায়নি, তবে পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। জায়গাটি মূলত ক্যাটারিং ব্যবসার জন্য ভাড়া নেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে অনুমোদন ছাড়া রেস্টুরেন্ট ও সিসা বার হিসেবে চালু করা হয়।

এ ঘটনায় বুশরার স্বামী জাওয়াদ, লাউঞ্জ পরিচালক আফরোজা বিনতে এনায়েতসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই সিসা লাউঞ্জটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি হাফিজুর রহমান।

গুলশানের আরএম সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় ‘মন্টানা লাউঞ্জ’ নামের একটি সিসা বার ছিল। সম্প্রতি অভিযানের পর সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ফের খুলে দিতে এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙিয়ে দেনদরবার চলছে। তবে এমন একটি বা দুটি নয়। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর বেশ কয়েকটি সিসা বার খুলে দিতে রাজনৈতিক নেতাদের চাপে রীতিমতো চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা নারকোটিক্সের (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর)।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বনানীতে আল গিসিনো নামের সিসা বারের নেপথ্যে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে রনি চৌধুরী, এবং ফারেন হাইট নামের এক সিসা বার চলত প্রভাবশালী শেখ পরিবারের সদস্য শেখ ফারিয়ার নামে। তবে গত বছর আগস্টে সরকার পতনের পরপরই তাদের সবাই অজ্ঞাত স্থানে গা ঢাকা দেন। ফলে সিসা বার পরিচালনার বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক সিসা বার রাতারাতি চর দখলের মতো দখল হয়েছে। এছাড়া জড়িত অনেকে ভোল পালটে নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে হাজির হয়েছেন। এর সঙ্গে কতিপয় অসাধু আইনজীবী, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং হলুদ সাংবাদিকদের সিন্ডিকেট যুক্ত। এ কারণে ব্যাপক কড়াকড়ির পরও শেষ পর্যন্ত অবৈধ সিসা বারের ব্যবসা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হবে কি না-এমন সংশয় দেখা দিয়েছে।

সেলসিয়াস ও এক্সোটিক নামের দুটি সিসা বার আছে বনানী ১১ নম্বর রোডের ৪৩ নম্বর ভবনে। বুধবার সন্ধ্যায় ভবনের লিফটের সামনে দাঁড়ালে নিরাপত্তারক্ষীরা জানতে চান কোথায় যাবেন? সেলসিয়াস লাউঞ্জের কথা বলতেই দায়িত্বরত দুই নিরাপত্তারক্ষী একসঙ্গে বলে ওঠেন নারাকোটিক্সের কড়াকড়ির কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। চালু হলে পরে আসবেন। কখন খুলবে জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, মালিকরা ওপরে কথাবার্তা বলছেন। হয়তো শিগগিরই চালু হবে।

সম্প্রতি বনানীতে সিগনেচার নামের একটি সিসা বারে সাঁড়াশি অভিযান চালায় নারকোটিক্স। সেখান থেকে মাদকসেবনের বিপুল পরিমাণ উপকরণ জব্দের পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি তানভির নামের এক ব্যক্তি নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার তদবির শুরু করেছেন। নিজেকে প্রভাবশালী প্রমাণ করতে তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার প্রচুর ছবি ও সেলফি দেখান। এছাড়া বনানীর হাভানা ক্যাফে লাউঞ্জ নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের মালিক রফিক ফরাজি আগে আওয়ামী লীগের শেলটারে থেকে সিসা বার চালাতেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি ভোল পালটে নিজেকে বিএনপির পদধারী নেতা বলে পরিচয় দিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য হাভানা ক্যাফের ট্রেড লাইসেন্সে দেওয়া রফিক ফরাজির মোবাইল নম্বরে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি হাভানায় অভিযান চালিয়েছে নারকোটিক্স। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা হয়েছে। এরপর থেকেই রফিক ফরাজির মোবাইল নম্বর বন্ধ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অবৈধ সিসা বার চালাতে রাজনৈতিক নেতাদের চাপ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রভাবশালীদের তদবির আসছে। যেমন : বনানীতে ‘অরা’ নামের একটি সিসা বার খুলে দেওয়ার জন্য তদবির করছেন মেহেদী নামের এক সরকারি কর্মকর্তা। এছাড়া আল গিসিনো, থার্টি টু ডিগ্রি, ক্যাফে এক্সাইল, দ্য সিলভার লাউঞ্জ বা এস লাউঞ্জ ও ইয়া হাবিবিসহ আরও কয়েকটি সিসা বার চালাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এক প্রভাবশালী সচিবের ছেলে, এক অতিরিক্ত সচিব এবং একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মালিক নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

নারকোটিক্স কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান চালিয়ে সিসা বার বন্ধ করা হলেও প্রভাবশালীদের তদবিরে শেষ পর্যন্ত নমনীয় হতে হয়। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গোপনে মধ্যরাতে কার্যক্রম চালায়। যেমন : বনানী ১১ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘হেইজ’ নামের একটি সিসা বার বন্ধ করে দেওয়ার কয়েকদিনের মাথায় নাম বদলে (সিয়াম লাউঞ্জ) ফের কার্যক্রম শুরু করে। রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান চালু রাখা হয়। এছাড়া গোপনে আবাসিক হোটেল এবং অভিজাত ফ্ল্যাটেও সিসা সেবনের আড্ডা বসছে।

সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নেশার পাশাপাশি সিসা বারের অভ্যন্তরীণ আলো-আঁধারি পরিবেশ উঠতি বয়সিদের বিপথগামী করে তুলছে। প্রায় অন্ধকার ঘর এবং ছোট ছোট খুপরিতে তরুণ-তরুণীদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এতে নৈতিকস্খলন বাড়ছে। সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে জব্দ করা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে সিসা সেবনরত তরুণ-তরুণীদের ঘনিষ্ঠ অবস্থায় সময় কাটাতে দেখা যায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, সিসা সেবনে উচ্চমাত্রায় আসক্তি তৈরি হয়। তখন সিসা সেবন ছাড়া স্বাভাবিক জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়মিত সিসা সেবনে শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে গর্ভধারণে সমস্যা, এমনকি চিরস্থায়ী বন্ধ্যত্ব দেখা দিতে পারে। এছাড়া সিসা বারে যাতায়াত করা তরুণ-তরুণীদের একটি অংশ পরবর্তী সময়ে আরও ভয়ংকর নেশা যেমন : ইয়াবা ও আইসে আসক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, সিসায় ব্যবহৃত নেশা উপকরণে উচ্চমাত্রার নিকোটিন থাকে। সিসার মাত্র এক পাফে প্রায় ২০০ সিগারেটের সমপরিমাণ নিকোটিন দেহে প্রবেশ করে। এছাড়া ধোঁয়া টানার সময় ‘টার’ ও কৃত্রিম ফ্লেভারসহ আরও কিছু রাসায়নিক উপাদান দেহে প্রবেশ করে।

তবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট শহুরে অভিজাত শ্রেণির অনেকের মধ্যে সিসা সেবন নিয়ে একধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে। তাদের কেউ কেউ মনে করেন, সিসা তেমন ক্ষতিকর নয়। ইউরোপ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে প্রকাশ্যে সিসা সেবন করা হয়। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-তে বলা হয়েছে, সিসায় শূন্য দশমিক দুই-এর বেশি নিকোটিন থাকলে তা ‘খ’ শ্রেণির মাদক হিসাবে চিহ্নিত। আইনে সিসা বার বা লাউঞ্জ পরিচালনা ও সেবন সম্পর্কিত অপরাধ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম এক থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

অবৈধ সিসা বার সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক একেএম শওকত ইসলাম বলেন, যত প্রভাবশালীর তদবির আসুক না কেন, অবৈধ সিসা বার কোনোভাবেই আর চালাতে দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছে। কোথাও কোনো প্রতিষ্ঠান চলছে-এমন খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেখানে অভিযান চালাচ্ছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]