
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাত চরম সংকটে পড়েছে। গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে না পারা, বিপুল খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতির কারণে প্রাথমিকভাবে ৯টি এনবিএফআই বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই দীর্ঘদিন লোকসানে চলেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত আমানত ফেরত দিতে না পারা, ঋণ খেলাপির হার ৮০ থেকে ৯৯ শতাংশে পৌঁছানো এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে অচল ঘোষণা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেবে, এই ৯টি প্রতিষ্ঠানের অবসায়নে সরকারের প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বন্ধের তালিকায় রয়েছে এফএএস ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, আভিভা ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, জিএসপি ফাইন্যান্স ও প্রাইম ফাইন্যান্স। এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপির হার ৭৫ থেকে ৯৯ শতাংশ এবং ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি দুর্বল ব্যাংকের কাছেই প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার প্রাতিষ্ঠানিক এফডিআর (স্থায়ী আমানত) আটকে আছে। এর বাইরে আরও ২০টি দুর্বল এনবিএফআইয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রাতিষ্ঠানিক আমানত ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কাছেই সবচেয়ে বড় অঙ্কের এফডিআর আটকে রয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব, কমিশন বাণিজ্য ও উচ্চ সুদের প্রলোভনই এই বিপর্যয়ের মূল কারণ। ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ কিছু গোষ্ঠী দুর্বল ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলোকে লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি শফিকুর রহমান বলেন, “কমিশন বাণিজ্য ও রাজনৈতিক প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও এস আলম গ্রুপের প্রভাব তখন ব্যাপক ছিল।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “কোনো প্রতিষ্ঠান কোথায় টাকা রাখবে, সেটি তাদের নিজস্ব নীতি। কিন্তু প্রকৃত সমস্যা হলো দুর্নীতি ও অনিয়ম। দুর্নীতি বন্ধ না হলে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।”
অর্থনীতিবিদদের মতে, একের পর এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধসে পড়ায় দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় গভীর বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয়েছে। তারা মনে করেন, দুর্নীতি দমন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করলে এই সংকট আরও গভীর হবে এবং এর প্রভাব ব্যাংক খাত ছাড়িয়ে পুরো অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়বে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
কৃষি, অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর