
নড়াইল সদর উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের ঝামারঘোপ খালের ওপর নির্মিত সেতুটি এখন এলাকার মানুষের জন্য আতঙ্কের নাম। পাঁচ থেকে সাত বছর আগে আংশিক ভেঙে পড়লেও মেরামতের উদ্যোগ না থাকায় সেতুটি দিন দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুই জেলার সীমানায় অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন নড়াইল ও মাগুরার কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ আতঙ্ক ও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কৃষক, দিনমজুর, এমনকি অসুস্থ রোগীকেও এই ভাঙা সেতু পার হয়ে যেতে হয়। যেকোনো সময় ভেঙে ধসে পড়ে প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকলেও কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে এলজিইডি জানিয়েছে, আগামী এক মাসের মধ্যেই নির্মাণকাজ শুরু হবে।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সেতুর এক প্রান্তে অর্ধেক জায়গা জুড়ে ধসে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে পুরো জায়গায় গর্ত হয়ে ভেতরের রড বের হয়ে পড়ে। চার বছর আগে একটি ট্রাক চলতে গিয়ে হেলে পড়ে সেতুটি। এরপর স্থানীয় লোকেরা গর্ত হওয়া স্থানে কয়েকটি কাঠের বড় তক্তা দিয়ে ইজিবাইক, ভ্যান ও কৃষিপণ্য ঘোড়ার গাড়িতে পারাপার করছেন। নসিমন আর ভটভটি চললে কাঁপতে থাকে সেতুটি, তবুও বাধ্য হয়েই চলছে পারাপার। সেতুর তলদেশের অবস্থা আরও করুণ। ইটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুর নিচের দুটো গার্ডারের একটি ধসে একদিকে হেলে পড়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ঝামারঘোপ খালের ওপর নির্মিত হয় ১৩ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নড়াইল নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার ইকরামুল কবির জানিয়েছেন, তাঁরা অনুমোদন পেয়েছেন এবং আগামী এক মাসের মধ্যেই ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
খলিশাখালি গ্রামের এক ব্যবসায়ী বলেন, "এই ব্রিজটা ভেঙে থাকায় মাগুরা জেলা থেকে নড়াইল জেলার মিঠাপুর হাটে যেতে হলে ৮ কিলোমিটার নোহাটা ঘুরে মিঠাপুর হাটে যেতে হয়। আমাদের এই দুর্দশা কেউ দেখে না। কষ্টের শেষ নেই আমাদের।"
স্থানীয় অনেক কৃষক বলেন, "আমরা নিজেরাই চলাচলের জন্য কাঠ দিয়েছি। মাঠ থেকে ধান কেটে ঘোড়ার গাড়িতে নিতে হয় বাড়িতে। অনেক সময় গর্তে চাকা আটকে পড়ে। ভয় হয়, কখন যে ভেঙে নিচে পড়ে যাই, তবুও যেতে হয়। কত নেতা আসে যায়, এই ভাঙা সেতুর কাজ করে না। অনেক নেতা এসে দেখে চলে যায়, তারপর আর খবর থাকে না।"
ঝামারঘোপ কালিনগর গ্রাম থেকে খলিশাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন, "শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ব্রিজ পার হয়ে স্কুলে যায়। স্কুলে যাওয়ার সময় খুব ভয় লাগে। নিচে তাকালে মনে হয় পড়ে যাব। প্রতিদিন ভয় লাগে, কিন্তু যাওয়ার আর কোনো পথ নেই। অনেক সময় ভ্যান যেতে চায় না, তখন হেঁটে স্কুলে যেতে হয়।"
ইউপি সদস্য মো. শাহিন মিয়া বলেন, "ঝামারঘোপ কালিনগর এলাকার ১০০ থেকে ১৫০ ছাত্রছাত্রী ঝুঁকি নিয়ে খলিশাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়। এই এলাকা থেকে কোনো রোগী মাগুরা নিয়ে যেতে হলে ২০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।"
বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করা এই মানুষগুলো এখন একটাই প্রত্যাশা করছে—যত দ্রুত সম্ভব নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হোক, যাতে তাদের এই ভোগান্তি ও ভয়াবহ ঝুঁকির অবসান ঘটে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নড়াইল নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার ইকরামুল কবির বলেন, "আমরা সম্প্রতি নড়াইল প্রকল্প থেকে অনুমোদন পেয়েছি। আশা করছি যে, আগামী এক মাসের মধ্যেই ব্রিজের নির্মাণ কাজটি শুরু হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা আশা করছি কাজটি শেষ হবে।"
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর