
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, আগামীর নির্বাচন কখন, কীভাবে এবং কতটুকু গ্রহণযোগ্যভাবে হবে, তা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের মানুষ। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে তারা নিজেরাই সব করবে, তবে তা ভুল। এই মানুষ এখনও জুলাই অভ্যুত্থানের কথা শুনলে তাদের শরীর শিউরে ওঠে। এই মানুষের সামনে আবার কেউ নতুন করে স্বেচ্ছাচারিতা করবে, তা হবে না। বগুড়ায় এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জামায়াতের জুলাই সনদে স্বাক্ষর বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, "পিআর-এর বিষয়কে সামনে রেখে জামায়াত এত বড় একটা আন্দোলনের ডাক দিল, মাঠে নামল; অথচ পিআর-এর বিষয়ে জুলাই সনদে কোনো কিছু লেখা নেই, জুলাই সনদেরই নিশ্চয়তা নেই, আইনগত কোনো ভিত্তি নেই; অথচ সেটাতে স্বাক্ষর করে চলে আসল। এটা তো জামায়াতের শক্তিশালী অবস্থানের সঙ্গে আরও শক্তিশালী দ্বিচারিতা। এটা তো তাদের কাছে কখনও প্রত্যাশিত ছিল না।"
তিনি বলেন, "আমাদের জায়গা থেকে চাই, রাজনৈতিক দলগুলো যাদের কাছে মানুষ অনেক আশা রাখে, তাদের কাছে এমন কথাই প্রত্যাশিত, যেটার ওপর তারা অটল থাকতে পারবেন। আমরা আশা করি তাহলেই আগামীর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সকল রাজনৈতিক দলের ওপর বাংলাদেশের মানুষের আস্থা থাকবে।"
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, "বিগত সময়ে বিএনপি যখনই সরকার গঠন করেছে, এটা একটা জোট সরকার ছিল। আবার আপনারা দেখে থাকবেন জামায়াত কখনই এর পূর্বে শক্তিশালীভাবে সংসদে কখনও প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, এককভাবে এখনও বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেউই শক্তিশালী নয়। আমরা মনে করি, আগামীতে আওয়ামী লীগ এবং আধিপত্যবাদ প্রশ্নে বিএনপি কিংবা জামায়াত কেউই এককভাবে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এই জায়গায় এনসিপির শক্তিশালী প্রতিনিধিত্ব রাজপথে যেমন লাগবে, সংসদেও প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের জায়গা থেকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিমত্তা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা মনে করি আগামীর বাংলাদেশের সংসদে তরুণরা যদি প্রতিনিধিত্ব না করে, তাহলে গতানুগতিক যে কালচার, সেগুলোর পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, ওই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে যারা কাজ করবে, যারা জুলাই সনদকে বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করবে, যারা খুনিদের বিচারের জন্য আজ থেকে পাঁচ বছর পরেও কাজ করবে, তাদের সাথে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামীতে যেকোনো পরিস্থিতিতে কাজ করব।"
সারজিস আলম বলেন, "বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা এবং পদক্ষেপ নেওয়াসহ আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলায় সমন্বয় সভা করছি। আগামী সংসদে সরকারি দল অথবা শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে হলে, আমাদের সেন্ট্রাল থেকে স্থানীয় পর্যায়ের ওয়ার্ড পর্যন্ত সাংগঠনিক কাঠামো থাকতে হবে। এই লক্ষ্যে আমরা বগুড়া জেলাতেও সমন্বয় সভা করছি। এ বিষয়ে আমরা জেলা নেতৃবৃন্দকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেব। আমরা খুব কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি দেখতে পাব বলে আশাবাদী।"
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস বলেন, "আগামীর নির্বাচন কখন, কীভাবে, কতটুকু গ্রহণযোগ্যভাবে হবে, এটা যদি নির্বাচন কমিশন মনে করে তারা নির্ধারণ করবে, তাহলে এটা ভুল। এটা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের মানুষ। তারা যদি মনে করে এই স্বেচ্ছাচারিতা করে তারা একের পর এক পার পেয়ে যাবে, তাহলে সেটা হবে না। এই মানুষ এখনও জুলাই অভ্যুত্থানের কথা শুনলে তাদের শরীর শিউরে ওঠে। এই মানুষের সামনে আবার কেউ নতুন করে স্বেচ্ছাচারিতা করবে, তা হবে না।"
তিনি বলেন, "আমরা মনে করছি যদি জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়া হয়, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়, বিচারিক প্রক্রিয়াগুলো সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয় এবং চলতে থাকে, পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিতে পারে, তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু যদি মনে করে যে যার মন মর্জি মতো কাজ করে যখন যেটা করে দেবে, সনদেরও খবর নেই, বিচারেরও খবর নেই, সংস্কারেরও খবর নেই, তাহলে তারা যে অলীক স্বপ্নগুলো দেখছে, এগুলো শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে, বাস্তবায়ন হবে না।"
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনেক বেশি আশাবাদী থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এই সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন একটা বিষয়ে এনসিপিকে প্রতীক 'শাপলা' দেওয়ার বিষয়ে যে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে এবং বিভিন্ন প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে, আমরা এই নির্বাচন কমিশনের ওপর সেই আস্থাটুকু রাখতে পারছি না।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা খুব করে চাই, একটা স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন তার মেরুদণ্ড সোজা রাখুক। কিন্তু আমরা দেখছি, কোনো আইনগত বাধা না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এই নিয়ে আইন পড়ান, আইন লিখেন প্রত্যেকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন যদি চায়, শাপলা প্রতীক এনসিপিকে দিতে পারে। এরপরেও যখন আমাদের সাথে এই স্বেচ্ছাচারী আচরণ করা হচ্ছে, তখন আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশন তার স্বকীয়তা ধরে রাখার মতো গার্ড শো করতে পারছে না, কারো না কারো দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। এই নির্বাচন কমিশন যদি এই আচরণ এখনই করে, আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি আগামী নির্বাচনে এই নির্বাচন কমিশনের ওপর এনসিপি কখনই আস্থা রাখবে না।"
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল), রাজশাহী বিভাগ সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব ইমরান ইমন, কেন্দ্রীয় কমিটি ও সংগঠক ডাঃ আব্দুল্লাহ আল সানি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বগুড়া জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর