
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রসাটম সম্প্রতি উন্মোচন করেছে তাদের তৈরি এক নতুন ধরনের প্লাজমা রকেট ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ। এই প্রযুক্তি মহাকাশযাত্রায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আরএনডি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ইঞ্জিন ব্যবহার করে পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ দিন, যেখানে বর্তমানে প্রচলিত প্রযুক্তিতে সময় লাগে প্রায় সাত থেকে নয় মাস।
ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার নিউজ জানিয়েছে, রাশিয়ার এই প্লাজমা ইঞ্জিন গতি ও কর্মক্ষমতার দিক থেকে স্পেসএক্সের স্টারশিপ এবং নাসার আর্টেমিস প্রকল্পকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্লাজমা হলো পদার্থের চতুর্থ অবস্থা—কঠিন, তরল ও গ্যাসের পর একটি উচ্চতাপমাত্রার আয়োনাইজড পদার্থ। সূর্য, বজ্রপাত কিংবা নিয়ন বাতির আলোয় যে কণাগুলো দেখা যায়, সেটিই প্লাজমা।
রসাটমের নতুন ইঞ্জিনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গ্যাসকে অতিমাত্রায় উত্তপ্ত করে প্লাজমা তৈরি করা হয়। এরপর সেই প্লাজমাকে চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে উচ্চবেগে নির্গত করা হয়, যা রকেটকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়।
ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিভিউ জানিয়েছে, এই ইঞ্জিনের গতি ঘণ্টায় কয়েক লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তুলনামূলকভাবে নাসার ভয়েজার-১ মহাকাশযান চলেছে ১৭ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড গতিতে, যেখানে রাশিয়ার এই ইঞ্জিনে তা পৌঁছাতে পারে ৫০ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড বা তারও বেশি।
স্পেস ইনসাইডার টেক জানিয়েছে, রসাটমের ইঞ্জিনে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এতে দীর্ঘমেয়াদে শক্তি সরবরাহ সম্ভব হবে, কমবে জ্বালানি খরচ ও নির্ভরতা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এতে মঙ্গলে যাত্রার ব্যয় প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে, কারণ এটি পুনঃব্যবহারযোগ্য এবং কম জ্বালানিতে দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম।
তবে এই প্রযুক্তির সামনে কিছু বড় চ্যালেঞ্জও আছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, এত উচ্চ তাপমাত্রায় প্লাজমা তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জটিল একটি প্রক্রিয়া। রকেটের কাঠামোকে তীব্র তাপ ও বিকিরণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
অন্যদিকে, পরমাণু শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকিও উপেক্ষা করা যায় না। সামান্য ত্রুটি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
যদিও প্রযুক্তিটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। তাদের মতে, একবার সফলভাবে মহাকাশে ব্যবহৃত হলে এটি শুধু মঙ্গল নয়, সমগ্র সৌরজগত জয়ের পথ উন্মুক্ত করবে।
দ্রুতগামী, নিরাপদ ও জ্বালানিসাশ্রয়ী এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে মহাকাশ ভ্রমণকে করে তুলতে পারে *বাস্তবসম্মত ও বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক।
অনেকে ইতিমধ্যেই বলছেন— “এটাই হতে যাচ্ছে রকেট প্রযুক্তির পরবর্তী বিপ্লব।”
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর