গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় ৬৬ বছরের এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণের ঘটনার দুই দিন পর তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
অভিযুক্ত আইয়ুব আলীর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হামলাকারীদের ঘেরাও করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে অভিযুক্তের স্ত্রী ও তার ভাইসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার (২২ অক্টোবর) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাদুল্লাপুর থানার ওসি তাজউদ্দিন খন্দকার বলেন,হামলায় জড়িত তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের আলীনগর (পাতারপাড়া) গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আইয়ুব আলীর স্ত্রী মিনারা বেগম (৩৮), তার ভাই শহিদুল ইসলাম (৪০) ও তার স্ত্রী মনজুয়ারা বেগম (৩৫)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বৃদ্ধার ছেলে বউ বাড়ির পাশে কৃষিক্ষেতে যাচ্ছিলেন। এ সময় ধর্ষণ মামলার আসামি আইয়ুব আলীর ছেলে মিজানুর রহমান তাকে উসকানিমূলক কথা বলেন। একপর্যায়ে আইয়ুব আলীর ভাই শহিদুল ইসলাম, তার স্ত্রী মনজুয়ারা বেগম, আইয়ুবের স্ত্রী মিনারা বেগম মিলে আফরোজাকে টেনে-হিঁচড়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন এবং হাতে কামড় দিয়ে আহত করেন।
পরে চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হামলাকারীদের বাড়ি ঘিরে ফেলেন এবং তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ পাঁচ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সাদুল্লাপুর থানার ওসি তাজউদ্দিন খন্দকার বলেন, খবর পেয়ে ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই সুপদ রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ৩ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
তিনি আরো বলেন, হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী বৃদ্ধার ছেলে বাদী হয়ে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে আটককৃতদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও জানান, এর আগে ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর ছেলে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। তবে ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি আইয়ুব আলী ঘটনার পর থেকেই পলাতক। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, গত রবিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে আলীনগর গ্রামের ফাঁকা মাঠে ৬৬ বছরের ওই নারীকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে আইয়ুব আলী। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি এখনও চিকিৎসাধীন আছেন। অভিযুক্ত আইয়ুব আলী (৪৫) আলীনগর গ্রামের আকবর আলীর ছেলে ও পেশায় কৃষক। সে দুই সন্তানের জনক।
এদিকে, ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট যৌথভাবে গাইবান্ধা শহরের এক নম্বর রেলগেট এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ঘণ্টাব্যাপী ওই কর্মসূচিতে বক্তারা দ্রুত আইয়ুব আলী ও তার পরিবারের হামলাকারী সদস্যদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
অন্যদিকে, ঘটনার পর থেকে পুরো আলীনগর এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আইয়ুব আলী অতীতেও এ ধরনের অনৈতিক কাজে জড়িত ছিল। তারা দাবি জানিয়েছেন, দ্রুত আইয়ুব আলী ও তার সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর