সিলেট-৪ আসন (জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) পর্যটন ও খনিজ সম্পদে ভরপুর সিলেট-৪ আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। মৃদু শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে গ্রামের প্রতিটি পাড়া ও মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে চলছে জমজমাট নির্বাচনী আলোচনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর নির্বাচনের দিকে দেশ এগোচ্ছে বলে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিগত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ ৭ বার, বিএনপি ৩ বার, স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টি একবার করে জয়ী হয়েছে। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনীতির মাঠে এসেছে বড় পরিবর্তন। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা বর্তমানে ভোটের মাঠে সক্রিয় না থাকায় বিএনপি, জামায়াত, জমিয়ত, খেলাফতসহ অন্যান্য দলগুলো মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ইসলামী দলগুলো একক প্রার্থী দেওয়ায় তারা অনেকটা নির্ভার হয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের অবস্থান: সিলেট-৪ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। তিনি সর্বশেষ কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে তিনি মনোনয়প্রাপ্ত হয়েছিলেন। সম্প্রতি হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করে নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার পর সীমান্ত জনপদে তার পক্ষে ব্যাপক সাড়া দেখা গেছে। সিলেট ‘বিএনপির জামান’ হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই অঞ্চলের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে আছেন। করোনা মহামারি, ২০২২ সালের বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিনি ও তার অনুসারীরা সক্রিয়ভাবে জনগণের পাশে ছিলেন। ২৪’র গণঅভ্যুত্থানেও তিনি সরাসরি রাজপথে থেকে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তার হাতেগড়া অনেক নেতা বর্তমানে সিলেট বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির একটি সূত্র অনুযায়ী, শিক্ষিত, পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতা হিসেবে সামসুজ্জামান জামানই এই আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী হতে পারেন। সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে তিনি একটি ‘ফ্যাক্টর’।
মিফতাহ্ সিদ্দিকী: বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি ও সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ওই অঞ্চলে তেমন পরিচিত না হলেও নিয়মিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার পক্ষে গণসংযোগ, সভা ও সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আব্দুল হাকিম চৌধুরী: সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও সাবেক চেয়ারম্যান। সীমান্ত জনপদে তিনি ‘বিএনপির ভাগ্যবান নেতা হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে উপস্থিত থাকতেন না। সাবেক প্রবাসীমন্ত্রী ইমরান আহমদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার কারণে ১৭ বছর তাকে কোনো মামলাও মোকাবিলা করতে হয়নি। বরং উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে তিনি নির্বিঘ্নে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ওই সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সেখানে সিন্ডিকেট করে বালু, পাথর ও চোরাকারবার করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে, যার একজন অংশীদার ছিলেন হাকিম চৌধুরী। তার সর্বদলীয় ঐক্যের কারণে আওয়ামী লীগের লুটপাট ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ ঘটেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্টের পর তার মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে।
অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম: কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি প্রয়াত দিলদার হোসেন সেলিমের সহধর্মিণী। সাধারণ জনগণের অভিযোগ, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের সাধারণ মানুষের খবর রাখেননি।
হেলাল উদ্দিন আহমদ ও আবদুল হক: জেলা বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন আহমদ ও বিএনপি নেতা আবদুল হক হঠাৎ যুক্তরাজ্য থেকে এসে প্রার্থী হওয়ায় সীমান্ত জনপদের মানুষ তাদের ‘অতিথি পাখি’ হিসেবে দেখছেন। স্থানীয় জনগণ মনে করেন, তারা পরিচিতি পাওয়ার জন্য এসেছেন এবং মনোনয়ন না পেলে আবার যুক্তরাজ্যে ফিরে যাবেন।
অন্যদিকে, জামায়াত ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন ফুরফুরে মেজাজে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে তার একটি নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। জামায়াতের একটি সূত্র প্রথমে ভেবেছিল অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান নির্বাচন করবেন না, যা তাদের নির্ভার রেখেছিল। তবে তার নির্বাচন করার ঘোষণায় জামায়াত নেতাকর্মীদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। জয়নাল আবেদীনকে মোকাবিলায় সিলেট-৪ আসনে সুশিক্ষিত, ত্যাগী ও পরীক্ষিত অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের বিকল্প নেই বলে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচার চালাচ্ছেন।
জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৮০’র দশক থেকে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানকেই তারা সিলেট-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। তার ত্যাগ, সততা, নিষ্ঠা ও পরিকল্পনা বর্তমান দলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। এম. ইলিয়াস আলীর অনুপস্থিতিতে সিলেটে বিএনপির অবস্থান শক্ত করতে তাকে দলের মূল্যায়ন করা উচিত। পাশাপাশি আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করলে জামায়াত-শিবির মোকাবিলায় জামানকে মূল্যায়ন করা উচিত বলেও তারা মনে করছেন।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর