• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১১ মিনিট পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৪২ দুপুর

একাধিক বিয়ে নিয়ে যা বলা আছে ইসলামে, আমরা কী করছি?

ফাইল ফটো

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে হলো এমন একটি পবিত্র সম্পর্ক, যা মানবজীবনের ভারসাম্য, স্নেহ ও দায়িত্ববোধের প্রতীক। তবে বর্তমানে ‘বহুবিবাহ’ শব্দটি বিতর্কের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। 

যেখানে ইসলামের উদ্দেশ্য ও বর্তমান প্রয়োগের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর ব্যবধান। বহুবিবাহের এই অনুমতির সঙ্গে আল্লাহ তাআলা ‘ইনসাফ’ বা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কঠোর শর্ত যুক্ত করেছেন। এই ন্যায়বিচার কেবল আর্থিক ভরণপোষণেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং সময়, মনোযোগ, আবাসন এবং আচরণের পূর্ণ সমতাও এর অন্তর্ভুক্ত।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, এতিমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে তোমাদের জন্য অনুমতি রয়েছে অন্য নারীদের মধ্য থেকে দুই, তিন বা চারজনকে বিবাহ করার। তবে যদি ভয় কর যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, তাহলে একজনকেই যথেষ্ট মনে কর।’ (সুরা নিসা: ৩)

বহুবিবাহ নিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) সতর্ক করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুই স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়ল, কেয়ামতের দিন সে অর্ধাঙ্গ ঝুলন্ত অবস্থায় উপস্থিত হবে।’ (সুনান আবু দাউদ: ২১৩৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের সীমাবদ্ধতার কথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘তোমরা কখনও স্ত্রীগণের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না, যদিও তোমরা তা কামনা করো।’ (সুরা নিসা: ১২৯) এই আয়াতে সুবিচার বলতে ভালবাসা ও স্বাভাবিক মনের টানকে বোঝানো হয়েছে, যা আদল বা ইনসাফের বিপরীত নয়।

(তাবারি) তার মানে, বোঝা গেলো যে, একাধিক স্ত্রীর মধ্যে পূর্ণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা মানুষের পক্ষে অত্যন্ত দুরূহ। আর যদি স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা না যায়, তাহলে একাধিক বিয়ে করাই নিষিদ্ধ। তাই প্রথম আয়াতেই আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সামান্য সন্দেহ থাকলে একজন স্ত্রীতেই সীমিত থাকতে।

চার বিয়ের অনুমতি: ইসলামি হেকমত ও বাস্তব যুক্তি

ইসলাম বহু বিবাহকে না ফরজ, না ওয়াজিব, না সুন্নত করেছে; বরং একে ‘মুবাহ’ তথা প্রয়োজনভিত্তিক একটি সমাধান হিসেবে রেখেছে। মুফতি তাকি উসমানি বলেন, ‘বহু বিবাহ ইসলামে একটি অপশন, কর্তব্য নয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এই অপশনটি একটি বড় উপশম ও সামাজিক ভারসাম্যের কারণ হতে পারে।’ (ফিকহুল বুয়ু: ১/৪২১)

আবুল লাইস সামারকন্দি (রহ.) বলেন, ‘যেখানে সমাজে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি, অথবা বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, সেখানে বহু বিবাহ সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার শরয়ি সমাধান হতে পারে।’ (তানবিহুল গাফিলিন, পৃ. ৩৪৮)

কিছু বাস্তব যুক্তি ও প্রয়োগযোগ্য দিক

১. নারীর নিরাপত্তা ও সম্মান: বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত বা অসচ্ছল নারীদের জন্য বহু বিবাহ সম্মানজনক বিকল্প।
২. প্রাকৃতিক ভারসাম্য: অনেক দেশে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি, ফলে বহু বিবাহ একটি যৌক্তিক সমাধান হতে পারে।
৩. বাধ্যতামূলক নয়: ইসলামে একাধিক বিবাহের অনুমতি থাকলেও এটি কোনোভাবেই আবশ্যিক নয়। ইনসাফের কঠিন শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
৪. একক বিয়ের উৎসাহ: নবীজির সাহাবিগণের অধিকাংশই এক স্ত্রীতেই সন্তুষ্ট ছিলেন। 

ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, ‘যার ইনসাফ করার ভয় রয়েছে, তার জন্য একটিই উত্তম।’ (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন: ২/২৩)

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও শানে নুজুল

ইসলাম-পূর্ব যুগে অসংখ্য বিবাহের কোনো সীমাবদ্ধতা ছিল না। ইসলাম এ সংখ্যা সীমিত করে চারটে নির্ধারণ করে। কায়েস ইবনে হারেস (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি ইসলাম গ্রহণের সময় আটজন স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন; রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে বললেন, ‘তোমার জন্য চারজন স্ত্রী রাখা বৈধ।’ (ইবনে মাজাহ: ১৯৫৩)

সুরা নিসার ৩ নং আয়াতের শানে নুজুল বা অবতরণ-প্রসঙ্গ হলো, এক ব্যক্তি একটি এতিম মেয়ের অভিভাবকত্ব করত। সে তার সৌন্দর্য ও সম্পদে আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিয়ে করতে চাইল, কিন্তু ইনসাফপূর্ণ মোহরানা দিতে অস্বীকার করল। তখনই এই আয়াত নাজিল হয়, যাতে এতিম নারীদের প্রতি ইনসাফ নিশ্চিত করা যায়। (সহিহ বুখারি: ৫০৯২)

বর্তমান প্রেক্ষাপট: উদ্বেগজনক প্রবণতা

দুঃখজনকভাবে, বর্তমানে অনেকেই ব্যক্তিগত ইচ্ছাপূরণের জন্য ইসলামের এই কঠোর শর্তগুলো উপেক্ষা করছেন। প্রথম স্ত্রীর অধিকার ও সম্মতি অগ্রাহ্য করে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বাস্তব সক্ষমতা ছাড়াই একের পর এক বিয়ে করা হচ্ছে। এভাবে তারা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সতর্কবাণী ভুলে যাচ্ছেন, ‘সেই ব্যক্তি আমাদের মধ্যে নয়, যে অপরের ক্ষতিসাধন করে।’ (মুসনাদ আহমাদ: ২২৯৭)

দায়িত্বশীল প্রয়োগই মূল কথা

শরিয়তের অনুমতি পাওয়া এবং সেই অনুমতির দায়িত্বশীল প্রয়োগ—এ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘দ্বীন হলো সদুপদেশ বা কল্যাণকামিতা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার প্রতি? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর কিতাবের প্রতি, তাঁর রাসুলের প্রতি, মুসলিম শাসক ও সকল মুসলিমের প্রতি।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৫)

ইসলাম প্রয়োজনে একাধিক বিয়ের অনুমতি দিয়েছে, অপব্যবহারের লাইসেন্স নয়। বহুবিবাহ যেমন একদিকে সামাজিক ভারসাম্যের সমাধান, তেমনি ইনসাফহীন প্রয়োগে এটি ভয়াবহ অবিচারে পরিণত হয়। ইসলামের বিধান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে দায়িত্বশীল আচরণ করাই প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য। 

বহুবিবাহের অনুমতি থাকলেও তা যেন কোনোভাবেই নারীদের অধিকার হরণ বা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির হাতিয়ার না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা সমাজের সকল স্তরের মানুষের একান্ত কর্তব্য। 

মুফতি মাহমুদুল হাসান গাঙ্গুহি (রহ.) বলেন, ‘একাধিক বিবাহের অনুমতি থাকলেও, কেবল সেই ব্যক্তি করুক, যার মাঝে নফস ও চরিত্র নিয়ন্ত্রণ এবং ইনসাফের বাস্তবতা আছে।’ (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ৫/১৩৫)

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]