জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, প্রশাসনে এখন পর্যন্ত কেউ বিএনপিপন্থি আচরণ করেন, কেউ জামায়াতপন্থি আচরণ করেন। আবার কেউ পূর্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল ওই পন্থি আচরণ করেন। আমরা তাদেরকে স্পষ্ট করে বলি, এবার তারা অনেকটাই পার পেয়ে গেছে। এই পর্যায়ের অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মানুষের আগে ছিল না। কিন্তু আগামীতে যদি তারা এই আচরণ বহাল রাখেন আর আমাদেরকে এমন একটা বড় ঘটনার দিকে যেতে হয়। তখন কেউ আর বিন্দুমাত্র আশ্রয় প্রশ্রয় পাবেন না।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, যদি এনসিপিকে শাপলা প্রতীক পেতে রাজপথে রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচিতে যেতে হয়, তাহলে এনসিপি একই সাথে ওই স্বেচ্ছাচারী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আন্দোলনেও যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করব আপনারা দলীয় প্রশাসন না হয়ে আপনারা বাংলাদেশের প্রশাসন হয়ে উঠুন। হাইকোর্টে আওয়ামী লীগের অনেক দোসর এখনো বসে আছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা গুরুত্বপূর্ণ আদালতে আইনজীবী থেকে শুরু করে বিচারক পর্যায়ে এমন অনেকে আছে যারা সুযোগ পেলেই গুরুত্বপূর্ণ হত্যা মামলার আসামিদেরকে জামিন দিয়ে দেয়। টাকার বিনিময়ে হচ্ছে, আবার পলিটিক্যাল নিগোসিয়েশনের মধ্যে হচ্ছে। আমরা মনে করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা যদি এই বিষয়ে কঠোর না হন, তাহলে আগামীর বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা আপনারা নিশ্চিত করতে পারবেন না। নির্বাচন একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে।
সারজিস আলম আরও বলেন, যেদিন জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে, যেদিন এই আদেশ জারি করা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এবং গণভোটে যদি জুলাই গণ সনদের পক্ষে রায় আসে, তখন কোন নোট অফ ডিসেন্টকে বিবেচনা করা হবে না। এই নিশ্চয়তা যেদিন আসবে, সেদিন এনসিপি নির্দ্বিধায় বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে জুলাই সনদের স্বাক্ষর করবে। তার পূর্বে কোন নিশ্চয়তা ছাড়া শুধুমাত্র একটি কাগজে লেখা সনদে স্বাক্ষর করে জনগণের সাথে প্রতারণা করতে পারবে না।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে এনসিপির এই নেতা আরো বলেন, আগামীর বাংলাদেশে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার এবং বিচারিক প্রক্রিয়া ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে এককভাবে বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্ব দিতে পারবে না। সেই জায়গায়ও এনসিপির নিশ্চয়তা আবশ্যক।
সারজিস আলম বলেন, শুধু কয়েকটি আসনকে সামনে রেখে সংসদে যাওয়ার জন্য, জোট করার জন্য কোন চিন্তা করছে না এনসিপি। আমরা মনে করি, কোন রাজনৈতিক দল যদি তাদের জায়গা থেকে জুলাই সনদের প্রত্যেকটি সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতি কমিটেড থাকে, বিচারিক প্রক্রিয়াকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য কমিটেড থাকে, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কমিটেড থাকে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি সহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কমিটেড থাকে- তাহলেই আগামী নির্বাচনে কোন দলের সাথে ঐক্য হতে পারে।
সারজিস আলম বলেন, আইনগতভাবে শাপলা প্রতীক পেতে এনসিপির কোনো বাধা নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের জায়গা থেকে স্বেচ্ছাচারিতা করছে, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। নির্বাচন কমিশন অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় নিজেদের স্বাধীনতা, স্বকীয়তা প্রদর্শন না করতে পারে তাহলে আগামী নির্বাচনে তাদের ওপর আমরা আস্থা রাখতে পারব না ।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা আহ্বায়ক কমিটি ও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি করা হবে বলে জানান সারজিস আলম ।
এর আগে সকালে এনসিপির জেলা সংগঠক ইকরাম হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। এরপরই শুরু হয় সাংগঠনিক আলোচনা। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কমিটির নেতাকর্মীরা সমন্বয় সভায় অংশ নিয়েছেন। এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি যুগ্ম সদস্য সচিব আহনাফ সাঈদ খানের সভাপতিত্বে সমন্বয় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক ও ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল্লাহ হায়দার, কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক খাইরুল কবির, সংগঠক সাঈদ উজ্জ্বল, কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য দিদার শাহসহ দলের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর