কিশোরগঞ্জের ভৈরবকে দেশের ৬৫তম জেলা ঘোষণার দাবিতে ট্রেন থামিয়ে রেলপথ অবরোধ করছে ছাত্র-জনতা। তারা লাল কাপড় ও ব্যানার হাতে নিয়ে ‘ভৈরবকে জেলা চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় বিক্ষোভকারী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে মুহুর্মুহু পাথর ছুড়লে এক যাত্রী আহত হয়।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টায় শহরের ভৈরব রেলওয়ের স্টেশনে প্লাটফর্মে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-চট্রগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রোডের রেল যোগাযোগ বন্ধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে ব্যাডমিন্টন খেলে আন্দোলনকারীরা। পরে ১১টা ৪২ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা জানায়, ভৈরবকে দেশের ৬৫তম জেলা ঘোষণার দাবিতে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় লোকজন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রেলপথ অবরোধ শুরু করে ভৈরব জংশন স্টেশনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনকে ভৈরব রেলওয়ের স্টেশনে আটকে দেয় আন্দোলনকারীরা। এতে রেলের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট যাবৎ ট্রেনটি আটকে রাখে বিক্ষোভকারীরা।
কর্মসূচিতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি হাজি মো. শাহিন, ছাত্রনেতা মোহাম্মদ জাহিদুল, মাওলানা শাহরিয়ার, গণ অধিকার পরিষদের সংগঠক ইমতিয়াজ আহমেদ, ছাত্রনেতা গোলাম মহিউদ্দিন, মুহাম্মদ জুনায়েদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, ভৈরব ব্রিটিশ আমল থেকেই সমৃদ্ধ জনপদ ও বাণিজ্যনগরী হিসেবে পরিচিত। এখানে সড়ক, নৌ ও রেলপথে অনুকূল যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে। ভৈরববাসীর দাবির মুখে ২০০৯ সালে সরকার ভৈরবকে জেলা ঘোষণার জন্য একটি পরীক্ষামূলক কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে জেলা ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, এরই মধ্যে ১৫ বছর কেটে গেছে। এখন আর দাবির বিকল্প নেই। প্রয়োজনে তাঁরা রাজপথে ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলবেন। তাতেও কাজ না হলে ভৈরব হয়ে যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ঢাকায় যায়, তা বন্ধের মাধ্যমে ঢাকাকে অচল করে দেওয়া হবে। আজ দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। আগামী দিনে অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়কপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ের থানার ওসি সাঈদ আহমেদ জানান, উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলার ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এছাড়াও গতকাল রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় ভৈরব দূর্জয় মোড়ে ঢাকা- সিলেট মহাসড়ক ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। অবরোধ চলাকালে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বাঁশ ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়। এসময় প্রায় ২ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ভোগান্তিতে পড়েন শতাধিক যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা।
আজ এই কর্মসূচিতে বিএনপি, গণ অধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতা–কর্মীরা একাত্মতা প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ভৈরববাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ভৈরবকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে ওই বছরের অক্টোবর মাসে কিশোরগঞ্জকে ভেঙ্গে কটিয়াদী, বাজিতপুর, অষ্টগ্রাম, কুলিয়ারচর উপজেলার সমন্বয়ে ভৈরবকে দেশের ৬৫তম জেলা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে তৎকালীন সরকার। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর