দুধ মানেই আমরা ভাবি গরু, ছাগল, মানুষ বা অন্য কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর কথা। কিন্তু প্রকৃতির এক আশ্চর্য দান হলো—কবুতরের দুধ। অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি, কবুতরও দুধ দেয়! বিজ্ঞানীরা এই দুধকে বলেন “পিজন মিল্ক” (Pigeon Milk), যা নবজাতক কবুতরছানার একমাত্র খাদ্য হিসেবে কাজ করে।
এই দুধ স্তন্যপায়ীদের মতো স্তনগ্রন্থি থেকে আসে না। এটি কবুতরের গলার ভেতরে থাকা ‘ক্রপ’ (crop) নামের থলি সদৃশ এক অঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়। ডিম ফোটার কয়েকদিন আগে থেকেই ক্রপের কোষগুলো ঘন হয়ে সাদা দুধের মতো তরল তৈরি করতে শুরু করে। বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার পর মা ও বাবা উভয় কবুতরই ঠোঁটের মাধ্যমে সেই দুধ খাওয়ায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, কবুতরের দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ইমিউন সেল ও প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এসব উপাদান নবজাতক ছানার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়। আশ্চর্যের বিষয়, পুরুষ ও স্ত্রী উভয় কবুতরই দুধ উৎপাদন করতে সক্ষম—প্রাণিজগতে যা অত্যন্ত বিরল।
শুধু কবুতর নয়, ফ্লেমিংগো ও সম্রাট পেঙ্গুইনও দুধজাতীয় তরল উৎপন্ন করে। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কবুতরের দুধ সবচেয়ে পুষ্টিকর ও জৈবিকভাবে জটিল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিজন মিল্কের রাসায়নিক গঠন ও কার্যপ্রণালী মানুষের বুকের দুধের সঙ্গে আশ্চর্য মিল রয়েছে। এটি শুধু পুষ্টির উৎস নয়, বরং এক ধরনের ‘ইমিউন সিস্টেম ট্রেনার’, যা ছানাকে প্রাকৃতিকভাবে রোগপ্রতিরোধে সক্ষম করে।
বর্তমানে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে এই দুধ নিয়ে বায়োটেকনোলজিক্যাল গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা খুঁজছেন, এটি থেকে মানুষের জন্য উপযোগী ইমিউন বুস্টার বা প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট তৈরি করা যায় কি না।
প্রকৃতির এই বিস্ময় আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রাণিজগৎ এখনো কত অজানা রহস্যে ভরপুর। কবুতরের দুধ সেই বিস্ময়গুলোর একটি, যা আমাদের জীববিজ্ঞানের ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর