 
          
 
রাশিয়ার ক্রমাগত পারমাণবিক শক্তির প্রদর্শন এবার যুক্তরাষ্ট্রকেও নাড়া দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালু করবে।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “অন্যান্য দেশের পারমাণবিক পরীক্ষার কারণে আমি যুদ্ধ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি, আমরাও সমানভাবে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করব।”
তবে তিনি প্রকৃত পারমাণবিক বিস্ফোরণ নাকি পারমাণবিক সক্ষম অস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষা বোঝাতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট করেননি। এই ঘোষণা আসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈঠকের ঠিক আগে। যদিও ট্রাম্প জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তটি চীনকে কেন্দ্র করে নয়, বরং “অন্যদের কারণে” নেওয়া হয়েছে।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোর এক সামরিক হাসপাতালে সৈন্যদের উদ্দেশে ভাষণে দাবি করেন, রাশিয়া সফলভাবে নতুন এক পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করেছে। এবার তিনি কথা বলেন ‘পোসেইডন’ নামের একটি পরীক্ষামূলক পারমাণবিকচালিত পানির নিচের টর্পেডো নিয়ে, যার পরিসর ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুতিন বলেন, “পোসেইডনের ক্ষমতা আমাদের সবচেয়ে উন্নত আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও অনেক বেশি। এটি বিশ্বের একমাত্র অস্ত্র, যা প্রতিরোধ করা কার্যত অসম্ভব।”
পুতিন আরও জানান, বহুল আলোচিত ‘সারমাত’ বা “স্যাটান-২” নামের বৃহৎ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রও খুব শিগগিরই রুশ বাহিনীতে যুক্ত হবে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্রবাহী মিসাইল হিসেবে পরিচিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত “নিউ স্টার্ট চুক্তি” অনুযায়ী দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখতে বাধ্য। তবে এই চুক্তি ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ‘বুরেভেসতনিক’ নামের আরেকটি পারমাণবিকচালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাও চালিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার এসব পরীক্ষার উদ্দেশ্য মূলত কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা— যাতে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কোর শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়।
ট্রাম্প এর আগে পুতিনকে পরোক্ষভাবে সতর্ক করে বলেছিলেন, “চার বছর ধরে যে যুদ্ধ চলছে, তা এক সপ্তাহেই শেষ হওয়া উচিত ছিল। মিসাইল পরীক্ষার বদলে পুতিনের উচিত যুদ্ধ শেষ করা।”
কিন্তু পুতিনের নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পারমাণবিক পরীক্ষায় ফেরার নির্দেশ আসায় বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ‘পারমাণবিক ঠান্ডা যুদ্ধ’-এর নতুন অধ্যায় বিশ্বকে আবারও অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক এক যুগে ঠেলে দিচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, স্পুটনিক নিউজ।
সাজু/নিএ
 সর্বশেষ খবর