সম্পর্কে প্রতারণা অনেক সময় বাইরে থেকে যতটা সাধারণ মনে হয়, ভেতরে তা ততটাই জটিল। শুধু আবেগঘটিত বিশ্বাসঘাতকতা নয়, এতে জড়িয়ে থাকে মানসিক প্রভাব, নিয়ন্ত্রণ ও হিসাবি মিথ্যাচার। সম্প্রতি প্রাইভেট ডিটেকটিভ তানিয়া পুরী এক ‘বিয়ের আগে অনুসন্ধানমূলক’ কেসের ঘটনা তুলে ধরেছেন। তা প্রকাশ করেছে এক পুরুষের প্রতারণার ভয়ঙ্কর জাল।
তানিয়া পুরী ‘মোমেন্ট অব সাইলেন্স’ পডকাস্টে বলেন, সম্প্রতি আমরা একটি প্রি-ম্যারিটাল কেস পেয়েছিলাম। ছেলেটি ছিল নিখুঁত- ভালো পড়াশোনা, ভালো আয়। কিন্তু মেয়েটি বলেছিল, কিছু একটা গড়বড় মনে হচ্ছে। প্রতিদিন, বিশেষ করে নবরাত্রির সময়, সে সন্ধ্যা ৭-৮টার মধ্যে কোথায় যেন উধাও হয়ে যেত। সে বলতো, ‘না না, একটা অনুষ্ঠান আছে।’ আমরা তদন্ত করে দেখি, সে তার সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করছিল।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে, ওই ব্যক্তি একই সময়ে তিন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল। তার একজন ছিলেন সাবেক প্রেমিকা। অন্যজনের সঙ্গে সে লিভ টুগেদার করতো এবং তৃতীয়জনের সঙ্গে সে বিয়ে নিয়ে কথা বলছিল। আরও চমকপ্রদ বিষয় হলো, ছেলেটি টাকার জন্যও মানসিকভাবে প্রতারণা করতো। তানিয়া জানান, সে সাবেক প্রেমিকার কাছ থেকে টাকা নিতো এই বলে যে, তার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তারপর সেই টাকা দিয়ে লিভ টুগেদারে থাকা মেয়েটিকে উপহার দিতো।
মনোবিজ্ঞানী রাশী গুরনানি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, যখন কেউ জানতে পারে তার সঙ্গী একই সঙ্গে একাধিক সম্পর্কে যুক্ত, তখন তা তীব্র মানসিক আঘাত সৃষ্টি করে। লজ্জা, রাগ, বিভ্রান্তি ও গভীর শোক অনুভূত হয়। এতে দেখা দেয় ‘কগনিটিভ ডিসোন্যান্স’। অর্থাৎ যা বিশ্বাস করতাম তার সঙ্গে বাস্তবতার সংঘর্ষ। তিনি বলেন, এই ধরনের অভিজ্ঞতায় আত্মবিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাসের ওপর আঘাত লাগে। ভবিষ্যতের সম্পর্কগুলোতেও ভীতি ও অবিশ্বাস জন্ম নিতে পারে। সুস্থ হওয়ার পথ শুরু হয় নিজেকে দোষ না দেয়া ও সত্য স্বীকার করা দিয়ে। ধীরে ধীরে নিরাপদ ও স্বচ্ছ সম্পর্কের মাধ্যমে আস্থা পুনর্গঠন, থেরাপির সাহায্যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মসম্মান পুনরুদ্ধারের চর্চা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের প্রতারণামূলক আচরণ অনেক সময় নার্সিসিস্টিক (আত্মমুগ্ধ) বা অ্যান্টিসোশ্যাল প্রবৃত্তি থেকে আসে। যেখানে সহমর্মিতা অনুপস্থিত, আর সম্পর্ককে দেখা হয় লেনদেনের মতো এক ব্যবসা হিসেবে। রাশী গুরনানি বলেন, সব ক্ষেত্রে এটা নার্সিসিজম নয়। কখনো কখনো অপূর্ণ মানসিক নিরাপত্তা, শৈশবের অনিরাপত্তা বা আত্ম-অপূর্ণতার জটিলতা থেকেও মানুষ একাধিক সম্পর্কের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বা স্বীকৃতি খোঁজে। এটি মানসিক অপরিপক্বতা ও নৈতিক নিয়ন্ত্রণের অভাবের লক্ষণ।
মনোবিজ্ঞানী গুরনানির মতে, প্রাথমিক সতর্কসংকেতগুলো হলো- কথায় অসঙ্গতি। প্রশ্ন করলে প্রতিরক্ষামূলক আচরণ। বারবার ‘অপ্রাপ্য’ থাকা। অতিরিক্ত আকর্ষণীয় আচরণ বা ‘লাভ বম্বিং’। সূক্ষ্ম মানসিক প্রভাব। যেখানে আপনার অনুভূতিকেই আপনাকে সন্দেহ করানো হয়। তিনি পরামর্শ দেন, নিজের অন্তর্দৃষ্টির অস্বস্তিকে বিশ্বাস করুন। আবেগগত স্বাধীনতা বজায় রাখুন। বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরিবর্তে আচরণের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করুন। বিশ্বস্ত বন্ধু বা থেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- শুরুতেই স্পষ্ট সীমারেখা টানুন, যাতে প্রতারণা গভীর হওয়ার আগেই নিজেকে রক্ষা করা যায়।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর